বিআরটিএ’তে দালালদের খবরদারি

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চালকের আসনে থাকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের নির্দেশেই চলে প্রতিষ্ঠান। তবে বিআরটি এর চিত্র একদমই ভিন্ন। সেখানে বছরের পর বছর স্টিয়ারিংয়ের আসনে বসে আছে দালালদের একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে দালালদের দিকনির্দেশনাতেই চলছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ)তে বছরের পর বছর খবরদারি করে আসছে দুর্নীতিবাজদের একটি দালাল চক্র। গত কয়েক বছর যাবৎ পুরো বিআরটিএ টানা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে দালালদের একটি সিন্ডিকেট। কাগজপত্র জালিয়াতি, নথিপত্র গায়েব, চোরাই গাড়ি নিবন্ধনসহ সরকারের কোটিকোটি টাকা আত্মসাতের মতো বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি করে আসছে এই দালাল সিন্ডিকেড। এদিকে ইকুরিয়া বিআরটি এর আঞ্চলিক অফিসে ঘুষ না দিলে মেলে না ড্রাইভিং লাইসেন্স। পরীক্ষায় পাস করতে হলেও গুণতে হয় টাকা। শুধু তাই নয়, যেকোনো কাজ করতে গেলেই লাগে ঘুষ। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস সনদের জন্যও গুণতে হয় মোটা অংকের ঘুষ। গত বৃহস্পতিবার ইকুরিয়া বিআরটির এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে দেখা গেছে, হাতে কাগজ দেখলেই এগিয়ে আসেন আনসার সদস্যরা। পরবর্তীতে তারা যদি চায় আপনি কী কাজ করতে এসেছেন। পরে তাদের বিভিন্নভাবে কৌশলে ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুষ দিতে রাজি করান। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। সেই সঙ্গে নাম মাত্র পরীক্ষা দিয়ে মাত্র ২১ দিনের মধ্যেই লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার প্যাকেজ দেন তারা। আবার ঘুষের নির্ধারিত টাকা লেনদেন না হলে আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হয় আবেদনকারীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার শুধু ঢাকা মেট্রো সার্কেল থেকে লাইসেন্স পরীক্ষা হয় ২৯৫জনের, যার মধ্যে ফেল ছিল ২৪ জন। আর ঢাকা জেলা সার্কেলের ৪৯০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেনি ৬০জন। সাভার সার্কেলে ৪৮০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেন ৯০জন। এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, ঘুষ না দিয়ে যারা কোনোরকমে লিখিত পরীক্ষা উৎরে গেছেন, সামনে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয় আরো বেশি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, এই সরকারি দপ্তরে দিনে গড়ে ঘুষের লেনদেন হয় প্রায় কয়েক লাখ টাকা। এই টাকা নেওয়া হয় আমাদের মতো গ্রাহকদের কাছ থেকে। দালালদের হাত থেকে কোনো গ্রাহকই রেহাই পায় না।
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমাদের কাছে যারা কাজ করতে আসের আমরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এর বাইরে যদি কেউ ঘুষ লেনদেন করে তবে সেটা আমাদের অগচরে করে। যার কারণে আমরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তারা আরো জানান, আর এখানে ঘুষের বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস শাখায় দালালচক্রের তৎপরতা দেখা গেলেও গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলে তারা সরে পরেন। এদিকে বিআরটি এর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিআরটি এর অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে সেবাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। সরকার থেকে যদি দালালদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলেই একটি দালালমুক্ত বিআরটি এ গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে বিআরটি এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


বিজ্ঞাপন