পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করায় সেফুদার ফাঁসি দাবিতে মানববন্ধন

এইমাত্র জাতীয়

বর্তমান সময়ে নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি সেফাতুল্লা ‘সেফুদা’। রাজনীতি সহ নানা সামাজিক বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে জন্ম দিয়েছিলেন আলোচনা-সমালোচনার।


বিজ্ঞাপন

এবার বরাবরের মতো গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে আসেন সেফাতুল্লা। লাইভে তিনি কথা বলেন মডেল ও অভিনেত্রী সাফা কবিরের নিজেকে পরকালে অবিশ্বাসী বলে মন্তব্য করার ইস্যুতে। সাফা কবিরের বিপক্ষে কথা বলেছেন এমন মুসলমানদের গালি গালাজ করেন তিনি।

এ সময় লাইভ চলাকালীন এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনকে ছিঁড়ে ফেলেন এবং তা টয়লেটে নিক্ষেপ করেন এছাড়া সেফাতুল্লাকে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে অশ্রবণীয় ভাষায় গালি দিতে শোনা যায়।

সেফাতুল্লা তার লাইভ শেষে বলেন, ‘তোরা যদি আবার সাফাকে গালি দিস তবে একই কাজ আবার করবো।’

এদিকে পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করায় সেফুদার ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার প্রচার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সেফাতুল্লাহ একজন মানুষ হিসেবে তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু অন্য কারোর ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত দেয়ার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি।’

একইসাথে নাস্তিকতায় বিশ্বাসীদের ‘ধর্মবিদ্ধেষী’ উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের মতবাদ আপনাদের মত করে প্রচার করুন। কিন্তু হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মকে আঘাত করতে পারবেন না। এদেশের তৌহিদি জনতা তা সহ্য করবে না।’ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করে দেশে ফিরিয়ে এনে জনসম্মুখে তার ফাঁসি দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এ সময় আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন, ‘যে কোরআনকে সেফাতুল্লাহ অবমাননা করেছে সে কোরআন মানবতার কথা বলে, সাম্যের কথা বলে, নারীর অধিকারের কথা বলে তাই কোরআনের অবমাননার মাধ্যমে সে নারীর অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’

এদিকে ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেফুদার ফাঁসি দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকেরও নানা গ্রুপের পেজ এবং ব্যাক্তিগত আইডি থেকে।

এর আগে ফেসবুকে নানান ধরণের অশ্লীল, অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক ভিডিওবার্তা ছড়িয়েও আলোচনায় আসেন সেফুদা। ১৯৯০ সাল থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানীর ভিয়েনায় অবস্থান করছেন সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদা। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। লেখা-পড়া করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেফাত উল্লাহর স্ত্রী জানান, ২৮ বছর আগে দেশ ছাড়েন তিনি। তারপর থেকেই পরিবার থেকে তিনি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পরিবারের দাবি, বর্তমানে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত। আর তার এমন কর্মকাণ্ডে পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন বিব্রত।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেফাত উল্লাহ’র স্ত্রী বলেছিলেন, ‘সবাই, আত্মীয়-স্বজনের কাছে আমাদের মুখ নাই। কেমন লাগতেছে আমরা জানি। এখন এগুলো কি বন্ধ করার কোনো পথ নাই? ইউটিউব কি এগুলোর কোনো প্রতিকার করতে পারে না? আর উনি তো সিজোফ্রেনিয়া রোগী।’

এদিকে তার বিষয়ে ভিয়েনা বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও প্রবাসী সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘ভিয়েনায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে এক পারিবারিক ঝগড়ার কারণে কোর্টের রায়ে দীর্ঘদিন ভিয়েনায় জেল খাটেন সেফাতউল্লাহ। মুক্ত হবার পর অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী সেখানে তার লিগ্যাল হবার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। স্ত্রী সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেফাতউল্লাহ।’

এ সময় আহমেদ ফিরোজ আরও জানান, ‘সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতি মানুষের আগ্রহ তাকে আরো বেশি উন্মাদ করে তুলেছে। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন সেফাতউল্লাহ।’

তিনি আরও জানান, সেফাতউল্লাহকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অস্ট্রিয়া সরকার। ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে আসার সময়েই তিনি বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ভিডিওবার্তা দিচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশি জনগণ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। আর এই কারণ দেখিয়ে তিনি অস্ট্রিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পথ সুগম করতে চান।

এ বিষয়ে আহমেদ ফিরোজ বলেন, ‘ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস সেফাতউল্লার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অবগত আছেন। ভিয়েনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *