সুমন হোসেন, অভয়নগর: যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সিংগাড়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি উদ্বোধনের আগেই হস্তান্তর ডাক্তার না থাকায় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকায় গ্রামের সাধারন মানুষের মানে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের টাকায় হাসপাতাল তৈরী করে মানুষ যদি সেবা না পায়, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক একটি দ্বিতল ভবন তৈরী করার কি দরকার ছিলো? এমন অভিযোগ গ্রামের শত শত মানুষের মুখে মুখে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে একই সাথে আনুমানিক ১০০টি মা ও শিশু হাসপাতাল’র বাজেট আসে তার মধ্যে যশোর জেলার জন্যে ১টি বরাদ্দে থাকে। প্রত্যন্ত গ্রাম-অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো আবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে না যাওয়ায় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে কোনো আবেদন না যাওয়ার জন্যে হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়নি এবং কোনো লোক নিয়োগ হয়নি।
উপজেলার ভৈরব-উত্তর অবহেলিত জনপদের চারটি শ্রীধরপুর, বাঘুটিয়া, শুভরাড়া, সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের সাধারণ দিন-মজুর খেটে খাওয়া মানুষের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্যে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব ক্ষমতায় থাকা সময়ে সরকারের ৫কোটি টাকা ব্যায়ে একটি অত্যাধুনিক মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী ভবনটি নির্মিত হলেও সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো জনবল নিয়োগ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না করায় গ্রামের স্থানীয় সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ৫ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ শতক(১-একর) জমির উপর ২০১২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর নির্মিত ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক সাংসদ শেখ আব্দুল ওহাব। সিংগাড়ী গ্রামের মৃত-মোজাম শেখের ছেলে শেখ নাদের হোসেন, শেখ মুনতাজ হোসেন, মৃত-মজিদ শেখের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক শেখ এই তিন জন সিংগাড়ী বাজার সংলগ্ন এক একর জমি মানুষের কল্যাণে বিনামূল্যে দান করেন। আনুমানিক যার বর্তমান মূল্যে শতক প্রতি ৫০হাজার টাকা।
হাসপাতালটিতে রয়েছে ১টি ডাক্তার কোয়ার্টার, ১টি নার্স কোয়ার্টার এবং ১০টি বেড থাকতে পারবে এমন ১টি রুম, স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্যে পুরুষদের ১টি পায়খানা ও মহিলাদের জন্যে ১টি পায়খানা, পানির জন্যে টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং হাসপাতালের চারিদিকে ইট-বালুর একটি প্রাচীরসহ লোহার গেট লাগানো, একটি অত্যাধুনিক দ্বিতল ভবন মা ও শিশু হাসপাতাল।
সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব জানান, ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদের এবং দক্ষিণ নড়াইলের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা লাভের জন্যে সিংগাড়ী ১০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মিত হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৫কোটি ৫০লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালের সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমান সাংসদ এবং সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহেলার জন্যে অত্র অঞ্চলের খেটে খাওয়া দিন-মজুর সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শুভরাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফাজ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, আমরা ২জন ডাক্তার গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে নিয়মিত হাসপাতাল খুলে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা অব্যহত রয়েছে। হাসপাতালটি বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করেন।
হাসপাতালটি নির্মানের ৭বছর পর ২০১৯ সালের মার্চ মাসের ৬ তারিখে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন জনবল নিয়োগ না হওয়ায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরে উদ্বোধনের আগেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মতিন হাসপাতালটির দায়িত্বভার হস্তান্তরকারী কর্মকর্তা থেকে মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া আক্তার এর নিকট হস্তান্তর করেন। উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলিফ নূর জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হস্তান্তরের পর এনায়েত হোসেন নামের ১জন নৌশপ্রহরী এবং আলমগীর হোসেন নামের ১জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দিয়ে, মোট ২জন হাসপাতালটিতে কর্মরত আছেন। কোনো ডাক্তার রোগী দেখেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন অস্থায়ী রোগী দেখেন বাঘুটিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবু সাঈদ ও শুভরাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফাজ উদ্দিন দুই জনে অতিরিক্ত দায়িক্তে সিংগাড়ী ১০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালে রোগী দেখেন। ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালটি চালু রাখা হয়েছে। হাসপাতালটি বন্ধ থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, গ্রামপর্যায়ে গরীব-অসহায় মানুষের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তৎকালীন সিংগাড়ী ১০শর্য্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। গর্ভকালীন মায়েদের জরুরী সেবা দিতে, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্যে পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্রুত জনবল নিয়োগের মাধ্যেমে হাসপাতালটি স্থায়ীভাবে চালু হবে আশাবাদী।
এলাকাবাসী বলেন, তালাবদ্ধ হাসপাতালটি দ্রুত খুলে জনবল নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যহত রাখার এবং অবহেলিত সাধারন মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট উদ্ধোর্তন কর্মকর্তাদের নিকট দাবী।
