বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম আরজু : ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতি পরাধীনতার নাগ পাশ ছিন্ন করে মুক্তির দুয়ারে উপনিত হয়। একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই দিনের আনন্দ অনুভূতি একেবারে অন্য রকম।
আগের দিন ১৫ ই ডিসেম্বর সারা দিন ব্যাপী পলায়নরত পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বারবারিয়া বাথুলী কালামপুর এলাকায় মরনপন লড়াই করেছি। সেই লড়াইয়ে আমরা আমাদের সাথী সহযোদ্ধা আঃ ওহাব কে হারিয়েছি। এই দিনেই শহীদ আঃ ওহাব ছাড়াও মানরায় শহীদ চানমিয়া সাভারে শহীদ টিটু পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।
বারাহিরচর মাঠে ওহাব ভাইকে চোখের জলে বিদায় দিয়ে পরদিন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল নিয়ে মানিকগঞ্জ শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
১৬ ই ডিসেম্বর ব্যান্ড পার্টি সহকারে এলাকার ময় মুরুব্বি সহ হিজুলী মাঠে সমবেত হয়ে দুই লাইনে কাঁধে অস্ত্র নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে বিজয় মিছিল শহরের দিকে এগিয়ে যাই। মিছিলের সামনে এল এম জি কাঁধে সহযোদ্ধা আলী হোসেন ও এস এল আর কাঁধে আমি আমাদের দুই জনের পিছনে সারিবদ্ধ আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা গন বাদ্যের তালে তালে মানিকগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের চমকে দিয়ে আমাদের কমান্ডার ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর বাসভবনের সামনে উপস্থিত হয়।
আমরা ক্যাপ্টেন হালিমের পা ছুঁয়ে সম্মান প্রদর্শন করি। ক্যাপ্টেন হালিম মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বাহিনীর অসাধারণ নৈপুণ্যের ভূয়শী প্রশংসা করে আমাদের কমান্ডারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আমাদের বাহিনী কে মানিকগঞ্জ সদর থানার দায়িত্ব গ্ৰহনের নির্দেশ দেন। আমরা নির্দেশ মতো মানিকগঞ্জ থানায় আমাদের থাকা খাওয়া সহ অবস্থান গ্ৰহন করে ক্যাম্প স্থাপন করি। ক্যাপ্টেন হালিমের অধীনস্থ অন্যান্য থানার বাহিনী ধীরে ধীরে মানিকগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে এবং মডেল হাইস্কুল এবং সরকারি হাইস্কুলে অবস্থান নেয়।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই দিনের অনুভূতি কখনো ভূলার নয়।