নিজস্ব প্রতিনিধি : বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) মাদকাসক্ত সদস্যদের কপাল পুড়ছে। ইতোমধ্যে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন ১৭ জন সদস্য। এদের মধ্যে সরাসরি মাদক কেনাবেচায় জড়িত ৫ জনকে মাদকসহ গ্রেফতার করে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। এই ১৭ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪ জনকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের নাম চাকরিচ্যুতির তালিকায় রয়েছে। বিএমপির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে বরশিাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। মাদকসেবী বা মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত কোনও পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে বা কোনোভাবে অপরাধী প্রমাণিত হলে কোনও ছাড় পাবেন না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সন্দেহভাজন সদস্যদের ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর অক্টোবরে। এরপর থেকে প্রতি মাসে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের। গত ১৫ মাসে মোট ৪৮ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। অর্থাৎ তারা মাদকসেবী। এছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ নজরদারিতে ওই ১৭ জনের মধ্যে ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
বিএমপি’র উপ-কমিশনার (সদর) আবু রায়হান মো. সালেহ জানান, গত ১৫ মাসে ডোপ টেস্টে বিএমপি’র ১৭ পুলিশ সদস্যের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। এদের মধ্যে ৫ জন সরাসরি মাদক কেনাবেচায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করে ওই মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়া ১৭ সদস্যের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যায়ের ৪ জনকে এরইমধ্যে চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ হওয়া আরও ৮ থেকে ১০ জন সদস্যকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
উপ-কমিশনার আরও বলেন, মাদকাসক্ত সদস্যদের ধরতে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিট প্রধানরা কাউকে সন্দেহ করলে তারা গোপনে কমিশনার কার্যালয়ে মাদকাসক্ত কিংবা মাদক কারবারি পুলিশ সদস্যদের তালিকা পাঠিয়ে থাকেন। সন্দেহভাজনদের কৌশলে ডেকে এনে মুখের লালাসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে ডোপ টেস্ট করা হয়। এদের মধ্যে যাদের রিপোর্ট পজিটিভ হয় তাদের কিছুদিন পর আবারও ডোপ টেস্ট করা হয়। এরপরও মাদকাসক্তি নিশ্চিত হতে তাদের তৃতীয়বার ডোপ টেস্ট করা হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি অন্তত একজন সহকারী কমিশনার সম্পৃক্ত থাকেন। সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং স্বচ্ছতা রক্ষা করে দৈবচায়ন ভিত্তিতে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ডোট টেস্টসহ পরবর্তী অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তাদের ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পুলিশ সদস্যরা সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করবেন। সেই পুলিশ সদস্যরাই কোনোভাবে মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। তারা মাদক সেবনসহ মাদকের কারবারের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারেন না। নৈতিকভাবে প্রতিটি পুলিশ সদস্য সম্পূর্ণভাবে মাদকমুক্ত থেকে সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে কাজ করবেন। পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা রয়েছে কোনও পুলিশ সদস্য মাদকে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। সে অনুযায়ী সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের প্রতি মাসে নিয়মিত ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টে কারও রিপোর্ট পজিটিভ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে (বিএমপি) কনস্টেবল থেকে কমিশনার পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭শ’ সদস্য কর্মরত আছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।