আইলার এক দশক স্বাভাবিকতা ফেরেনি উপকূলে নানামুখী সমস্যায় লাখো মানুষ

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

এম এ স্বপন : প্রলয়ংকরী আইলার আঘাতের পর এক দশক কেটে গেলেও আজও স্বাভাবিকতা ফেরেনি দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট আর বৃক্ষরাজী শুন্য গোটা জনপদ দশ বছর পরেও স্বাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপর বয়ে যাওয়া প্রলয়ের। প্রকৃতির সে নির্মম তান্ডবের কথা মনে হলেই স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা ডুকরে কাঁদে প্রিয়মুখগুলো স্মরনে। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া জনপদে বসবাসরতরা অদ্যাবধি প্রতিটি মুহূর্ত নিরন্তর লড়াই করে চলেছে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। উপকূল রক্ষা বাঁধের করুন দশার সাথে পানীয় জল, জ¦ালানীসহ কর্মসংস্থানের সংকট সমগ্র এলাকাকে করে তুলেছে বিচ্ছিন্ন কোন দুর্গম জনপদে। সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে মুহুর্তের আইলা সর্বস্ব ছিনিয়ে নিলেও দশ বছর পরে এসে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এতদিন পরে এসে প্রতিটি মানুষ পরতে পরতে উপলব্ধি করছে সর্বনাশা আইলার নির্মমতা। তার সুদুর প্রসারী প্রভাব মোকাবেলায় রীতিমত হিমশিম খেয়ে উপকূলবাসী এখন ‘দুর্ভাগা ভাগ্য’কে দুষতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য ২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভয়ংকর আইলা আঘাত হানে দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদে। দিনের আলোয় এক মুহুর্তেই সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার উপকুলবর্তী আশাশুনি, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার মত সমুদ্র কোলে গড়ে ওঠা গাবুরা, বুড়িগোয়ালীনি, পদ্মপুকুরসহ শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভুতুড়ে জনপদে পরিনত হয় গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। বাঁধ ভেঙে সাগরের জলরাশি প্রবেশ করায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। ঘর বাড়ি আর গবাদী পশু জীব-জন্তুর সাথে শতাধিব মানুষও ভেসে যায় বানের জলে। হাজার হাজার গাছ-গাছালী উপড়ে যাওয়া ছাড়াও রাস্তাঘাট আর শত শত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে সমগ্র এলাকা বিধ্বস্থ জনপদের রুপ ধারন করে। আইলা সংঘটনের দশ বছর অতিক্রান্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে সেদিনের সবচেয়ে বেশী বিধ্বস্থ উপকূলীয় জনপদ গাবুরা পরির্দশনে যেয়ে দেখা যায় ভাঙাচোরা জীর্নশীর্ন উপকূল রক্ষা বাঁধের পাশ ঘেঁসে আজও বসতি রয়ে গেছে। বিস্তর ফাঁকা জায়গা থাকার পরও বাঁধের উপর বা বাঁধের পাশে বসতির কারণ হিসেবে আজিবার রহমান ও মহসীন আলমরা জানায় পাশের নদী-ই এখন তাদের উপার্জনের একমাত্র উৎস। তাছাড়া ভিতরের দিকে রাস্তাঘাটের কোন অস্থিত্ত্ব না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছু গড়ে ওঠেনি। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য এসব এলাকার অনেকে গত দশ বছর ধরেও বাঁধের উপর বা পাশে বসবাস করছে। জেলেখালী ক্লোজার সংলগ্ন বাঁধের উপর বসবাসরত ঐ দুই পরিবারের দাবি পেত্রিক ভিটায় ফেরার সুয়োগ থাকলেও সেখানে গেলে তাদের অসহায়ত্ব বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। রাস্তাঘাটা না থাকার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র হারিয়ে নুতন লড়াইয়ে নামতে হবে ভেবে অনেকের মত তারাও বাঁধে বসবাস করছে। তবে পরিবারের বাকি সদস্যদের আগের বসত ভিটায় অবস্থান করছে বলে জানান তারা। জেলেখালী গ্রামের ঐ দু’জনের মত নাপিতখালী, বড় গাবুরা এবং পাশের্^খালীসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষের অভিন্ন অভিযোগ যে আইলার আঘাতের পর থেকে গোটা এলাকা কর্মসংস্থান শুন্য। লবন মুক্ত না হওয়ায় কৃষি ফসল উৎপন্নের সুযোগ মেলে না দাবি করে তারা জানায় মাটিতে তীব্র লবনাক্ততার কারণে লবন পানি দিয়ে চিংড়ী চাষে বাধ্য হচ্ছে আইলা কবলিত এলাকার মানুষ। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কৃষি জমি হারিয়ে যাওয়া ও চিংড়ী চাষ একমাত্র আয়ের উৎসে পরিনত হওয়াতে সমগ্র এলাকাজুড়ে কাজের ক্ষেত্র আরও সংকুচিত হয়েছে। তাছাড়া আইলা পরবর্তী দু’তিন বছর সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে জরুরী ভিত্তিতে গৃহীত নির্মান প্রকল্পে অনেকে অংশ নিলেও বর্তমানে সে কাজও নেই। পাশের নদী এবং সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধিতে মাথাপিছু উপার্জনও আশংকাজনকহারে কমে গেছে। যার অবিসম্ভাবী পরিনতিতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে। আইলার সুদুর প্রসারী প্রভাব হিসেবে গোটা এলাকা কর্মসংস্থান শুন্য হয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তারা জানায় কর্মসংস্থান শুন্যতার কারণে বেঁচে থাকার জন্য এসব এলাকায় বসবাসরত প্রতিটি পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যকে পাশের নদীতে মাছ কাঁকড়া শিকারসহ মৌসুমী শ্রমিকের ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছে। তবে উপকূলীয় এ জনপদের মানুষ কেবল কর্মসংস্থান সংকটে ভুগছে না -উল্লেখ করে গাবুরার ফিরোজ, নীলডুমুরের আকবর ও শরীফ হোসেনসহ অন্যরা জানান, পানীয় জল নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে রয়েছে। খাবার কিংবা ব্যবহার উপযোগী পানির জন্য গোটা উপকূলীয় জনপদের মানুষকে বৃষ্টির উপর নির্ভর করতে হয় বলেও জানান তারা। যে কারণে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময় আইলা বিধ্বস্থ এ জনপদের প্রতিটি জীব-জন্তু আর গবাদী পশুর ন্যায় মানুষও চরম দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করে বলে দাবি স্থানীয়দের। আইলা কবলিত এলাকাজুড়ে খাবার পানির জন্য রীতিমত হা-হা-কা-র চলছে বলে মত দেন উপজেলা উপ-সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। স্থানীয়দের সাথে সহমত পোষন করে তিনি বলেন, আইলার আঘাতে গোটা জনপদ দীর্ঘদিন লবন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যাবতীয় মিষ্টি পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দশ বছর পরেও সেসব উৎসসমুহের পানি ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় গোটা এলাকাজুড়ে সুপেয় এবং ব্যবহার উপযোগী পানির সংকট তীব্রতর হয়েছে। দিনে দিনে এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নুতন নুতন উৎস তৈরী করে খাবার পানি সংরক্ষন করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। দুর দুরন্ত থেকে সংগ্রহ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে কিনে খাবার পানির চাহিদা পুরন করলেও গোসলসহ গৃহস্থলীর নানা কাজে লবন পানি ব্যবহারের ফলে এসব এলাকায় বসবাসরতরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে রয়েছে বলেও মত দেন চিকিৎসকরা। কর্মসংস্থান আর পানীয় জলের সাথে সাথে আইলার পর থেকে সমগ্র এলাকাজুড়ে জ¦ালানীর তীব্র সংকট তৈরী হয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। তাদের দাবি আইলার আগে গোটা উপকূলীয় এলাকা সবুজে ঘেরা ছিল। যে কারণে স্থানীয়দের বসত ভিটায় বেড়ে ওঠা গাছ-গাছালী দিয়েই তখন জ¦ালানীর চাহিদা পুরন হতো। কিন্তু আইলার আঘাতের পর গোটা এলাকা বৃক্ষরাজী শুন্য হয়ে পড়ায় স্থানীয়রা তীব্র জ¦ালানী সংকটে পড়েছে। চাহিদা পুরনে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌযানযোগে জ¦ালানী আনা হলেও অনেকে পাশের সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয়দের জ¦ালানীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ‘সিডর’ ‘আইলা’য় ব্যাপক ক্ষতির শিকার সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান কলবাড়ীর বিলাল হোসেন ও মথুরাপুরের তরুলতা মন্ডলসহ অনেকে। হরিশখালী, নাপিতকালী, চাঁদনীমুখা ও কামালকাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ স্বকীয়তা হারিয়ে সরু আইলে পরিনত হয়েছে। আইলার তান্ডবের পর এসমস্ত বাঁধ মেরামত ও সংস্কার না করার কারণে তা জীর্নশীর্ন হয়ে উপকূলজুড়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন অংশের বাঁধ অসংখ্যাবার ভাঙনমুখে পড়ায় সংলগ্ন অংশের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছে বলেও জানান স্থানীয়রা। ডুমুরিয়া খেয়াঘাটের ইজারাদার আমিনুর রহমান এবং আবু জারসহ অনেকে জানান, আইলার পর থেকে গোটা উপকূলীয় জনপদের লাখ লাখ মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। আইলার আঘাতের পর ভাঙন কবলিত অংশ ছাড়া উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামত বা সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তাদের। পাশের্^খালী গ্রামের নজরুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করেন, আইলার পর উপকূল রক্ষা বাঁধ নুতনভাবে সংস্কার না হওয়াতে বার বার ভাঙনমুখে পড়ায় গোটা এলাকা মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানসহ নানামুখি সংকটের মধ্যে থাকা হাজারও মানুষ মুলত ভাঙনমুখে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের দুরাবস্থার কারণে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। আইলার পর থেকে সমগ্র উপকূল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ষাট সত্তর দশকের দিকে তৈয়ার এসব বাঁধ আইলার সময় মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় গত দশ বছরে শুধুমাত্র ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত ছাড়া টেকসইভাবে বাঁধে কোন কাজ করা যায়নি। যে কারণে শ্যামনগর অংশের তিনটি পোল্ডারের প্রায় পাঁচ/ছয় কিঃ মিঃ বাঁধ খুবই ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে বলেও মত দেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় কোন কোন স্থানে দু’চারটি নারকেল ও তাল গাছ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও গোটা এলাকাজুড়ে অন্য কোন উদ্ভীদের চিহ্ন নেই। আইলার হিং¯্রতার শিকার হয়ে সমগ্র জনপদ যেন বৃক্ষশুন্য হয়ে পড়েছে। এক সময়ের সবুজের ছায়াঘেরা এ উপকূল মাত্র এক দশকের মধ্যে মরুভূমির রুপ ধারন করেছে। উদ্ভীদ শুন্য জনপদে বসবাসরতরা সারা বছর ধরে দিনের বেলা তপ্ত রৌদ্রে পুড়ে -দাবি করে স্থানীয়রা জানান বসত ঘরের বাইরে এক চিলতে ছায়া মেলে না দিনের বেলা। বর্ষার সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় থাকলেও গরমের দিনগলোতে প্রচন্ড কষ্টে কাটাতে হয় বৃক্ষ শুন্য ঐ জনপদে। মুলত মাটিতে লবনাক্ততার মাত্রা বেশী থাক্য়া ঐ এলাকায় কোন গাছ-গাছালী লাগিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে জ¦ালানীর সংকট প্রকট হওয়ার পাশাপাশি তপ্ত রৌদে পুড়ে সেখানে বসবাসরতরা নানামুখী স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হচ্ছে বলেও মুজিবর রহমান ও মহসীন আলমসহ অনেকেরই। এছাড়া কৃষি ফসল উৎপাদনের সুযোগ না থাকাসহ উদ্ভীদ শুন্য মরুভূমি সাদৃশ্য এ এলাকায় গাবাদী পশু আর গৃহপালিত জীব-জন্তুর অস্থিত্ত্ব বিলীন হয়ে গেছে বলেও জানায় অনেকে। লবন পানি আর প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে কেবল এখনও মানুষ সেখানে টিকে আছে বলেও দাবি তাদের। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে আইলা তাৎক্ষনিকভাবে গোটা উপকূলীয় এলাকাকে ধুয়ে মুছে একাকার করে দিলেও দশ বছর পরেও তার প্রভাব ফলে যাচ্ছে সমগ্র উপকূলবাসীর জীবনে। আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকার মানুষ শুধুমাত্র প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নানান ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ভাঙাচোরা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বহুমুখী সমস্যা প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয় বলেও দাবি স্থানীয়দের। কর্মসংস্থান থেকে, পানীয় জল এবং জরুরী স্বাস্থ্য সেবাসহ নানামুখী সংকটের সাথে সাথে ভাঙনমুখে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধ আইলা কবলিত জনগোষ্ঠীর জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে বলে জানান তারা। প্রলয়ংকরী ঐ প্রাকৃতিব দুর্যোগের পর দশ বছরেও তারা একটুকু ঘুরে দাড়াতে পারেনি দাবি করে জানান, জরুরী ভিত্তিতে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা না হলে সমগ্র এলাকা মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ত্রান বা অন্য কোন ধরনের সাহায্য চান না -উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান পাউবোর বাঁধ সংস্কার করে দেয়া হলে তারা গোটা এলাকাকে আবারও গুছিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রাখে। আইলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতির শিকার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মাসুদুল আলম জানান, দশ বছরেও বাঁধে এক কোদাল মাটি না পড়ায় তা আবারও গোটা এলাকাজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কয়েক সপ্তাহ পুর্বে ‘ফণী’র আগমন সমগ্র উপকূলজুড়ে তীব্র আতঙ্ক তৈরী হয়। তিনি জানান পাশের নদীর বাইরে স্থানীয়দের উপার্জনের বিকল্প উৎস না থাকায় কাজের সন্ধানে হাজার হাজার মানুষ মৌসুমী শ্রমিক হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি দেয়। অদ্যাবধি রাস্তাঘাট নির্মিত না হওয়ার কারণে এলাকায় বসবাসরতদের দুর্ভোগের সীমা নেই- বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে নদীতে মাছের পোনা সংগ্রহকারীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা স্থানীয়দের রুটি-রুজির ক্ষেত্রকে সংকুচিত করছে বলেও তিনি দাবি করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সেলিম খান বলেন, আইলা কবলিত এলাকার জন্য আপাতত বিশেষ কোন বরাদ্দ বা প্রকল্প চালু নেই। অন্যান্য এলাকার মত সেখানকার বসবাসরতরা ভিজিএফসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার জানান, সম্প্রতি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী গাবুরা এলাকা পরিদর্শন করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মানের প্রতিশ্রুত দিয়েছেন। আইলায় ক্ষতিগ্রস্থদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছে- জানিয়ে তিরি আরও বলেন বাঁধ নির্মান সম্পন্ন হলে পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রসংগত উল্লেখ্য আইলার ঘটনায় বাঁধ ভেঙে ও উঁচিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪/১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক শত মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষনিকের মধ্যে গৃহহীন হয় কয়েক লাখ মানুষ। লক্ষ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমি, ফসলের ক্ষেত আর শত শত কিঃ মিঃ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইলা’র তান্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত হওয়া দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদ সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকার ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১২২ জন মানুষ মুহুর্তেই নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। শুধু শ্যামনগরেই গৃহহীন হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩ জন। এ ছাড়া শ্যামনগরের ৯৬ হাজার ৯১৬টিসহ মোট ১ লাখ বিয়াল্লিশ হাজার ২৪৪টি বসতঘর বিধ্বস্থ হয়। উপজেলার ৪৮ হাজার ৪৬০ পরিবারসহ মোট ১ লাখ ১৪ হাজার পরিবার আইলা’র আঘাতে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আইলা’র ধ্বংসযজ্ঞে উপজেলার ৩৯৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩ শতাধিক মসজিদ, মন্দির স¤পূর্ণ ও আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ১৭৯ কিঃ মিঃ রাস্তা সম্পুর্ণ ও ৯৯ কিঃ মিঃ আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। ৪১টি ব্রীজ ও কালভাটসহ ১১৭ কিঃ মিঃ বেড়ীবাঁধ স¤পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুধু শ্যামনগরেই ১২৭ কিমি বাঁধের ৯৭ কিমি স¤পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেল এতিম শিশুরা
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো ঈদ উপহার পেল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৩শ’ এতিম শিশু। শুক্রবার সকাল ১১টায় শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের এতিম শিশুদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ ঈদ উপহার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার শামীম মুসফিক।
প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার মো. শামীম মুশফিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৩শ’ জন দুস্থ শিশুদের ও এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঈদের উপহার পাঠিয়েছেন। যাতে এসব এতিম বাচ্চারা অন্তত ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
এ সময় টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান বিশ্বাস, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বিএম তৌফিক ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মানব রঞ্জন বাছাড়, প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মোর্শেদা বেগম উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *