নিজস্ব প্রতিনিধি : ভূমিহীন ষাটোর্ধ্ব মনির আলী। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন স্কুল ঘরের বারান্দায়। সরকারের দেওয়া উপহার স্বপ্ননীড় পেয়ে তার মুখে এখন অন্তহীন হাসি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। আমার মনে খুব আনন্দ। স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে ঘরে থাকতে পারবো।
একইভাবে লাখ টাকার ঘর পেয়ে মুখে কোটি টাকার হাসি ভূমিহীন রজব আলীর। সিলেট সদর উপজেলার খাদিপাড়া ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রামে পরের বাড়িতে থাকতেন তিনি। মৃত্যুর আগে নিজের বাড়িতে মরতে পারবেন, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি হতে পারে, বলেই একরাস হাসির ঝলকানি তার মুখে।
আর ভূমিহীন পিয়ারা বেগম বাড়ি পাওয়ায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থসংস্থান করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য হুজুরকে দিয়ে দোয়া করিয়েছেন। প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে নিয়ে এতদিন অনাহারে অর্ধহারে কাটানো দিনগুলের কথা মনে করে কেঁদে ফেলেন।
তিনি বলেন, এখন অনাহারে থাকলেও নিজের ঘরে থাকবো। আগে বাড়ির চিন্তা করাতো ছিল স্বপ্ন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় সিলেট জেলায় মনির আলী, রজব আলী ও পিয়ারা বেগমের মতো ভূমিহীন এক হাজার ৪০৬ জনের হাতে সরকারের স্বপ্ননীড়ের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার।
এদিন দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট সদর উপজেলার হল রুমে প্রায় ১৭টি পরিবারকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এর আগে সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেট সদর উপজেলার হল রুমে থেকে এতে সংযুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আমরা গর্বিত। তার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদেরকে বিনামূল্যে বসতঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। ধাপে ধাপে এই কার্যক্রম আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীরা একদিনের বেতন এই প্রকল্পে দান করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। এই প্রকল্প শেষ হলে সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কাজ শুরু করবে।
ঘর প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, নিজাম উদ্দিন, আলী হোসেন প্রমুখ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৪৭৮ জনকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম রাখা হচ্ছে। শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলার মধ্যে সিলেট সদরে ১৪৪টি, দক্ষিণ সুরমায় ১২০, বিশ্বনাথে ৬৬৯, ওসমানীনগরে ৫৩৩, বালাগঞ্জে ৮৭৫, বিয়ানীবাজারে ১০৪, গোলাপগঞ্জে ২০০, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৩০, গোয়াইনঘাটে ৫০০, কানাইঘাটে ১৯৩, জৈন্তাপুরে ৩৩০, জকিগঞ্জে ১৩০ এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২৫০টি নির্মাণকৃত ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে জমি নাই, ঘর নাই এমন ‘ক শ্রেণির’ লোকজনকে প্রায় ১০ হাজার ৩১৩টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সঙ্গে আরো পাবেন নগদ ৪ হাজার টাকা করে। সে হিসেবে ভূমিহীন প্রতিটি পরিবারের পেছনে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ফলে ১০ সহস্রাধিক পরিবারে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১৮০ কোটি ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।