নিজস্ব প্রতিবেদক : খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তথ্যমন্ত্রী কান্ডজ্ঞানহীনের মতো বক্তব্য দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য একটি বেপরোয়া, বেআইনি, মধ্যযুগীয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের আলো বাতাসহীন, কান্ডজ্ঞানহীন হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মতো। সাবেক চার বারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। মিডনাইট সরকারের গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের কাছ থেকে এরকম বক্তব্য আসবে এটাই স্বাভাবিক। তথ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, প্রচ্ছন্নভাবে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় হত্যার নতুন ষড়যন্ত্র করছেন। দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত ১ এপ্রিল তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঈদের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আহবান জানাচ্ছি, ঈদের আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। জামিনে বাধা প্রদান করবেন না। তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া তিনি ডায়াবেটিসেও ভুগছেন। গত রোববার তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরনো যে শারীরিক সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলোই মাঝে-মধ্যে বাড়ে বা কমে। নতুন কোনো সমস্যা তার নাই। খালেদা জিয়াকে দেশের অভ্যন্তরের সর্বোচ্চ যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, সেটিই দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার সুচিকিসা হচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, প্রকৃতপক্ষে সেখানে তার নামমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে। ভর্তির পর এখনো তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, কিছু খেতে পারছেন না, হাত-পা নাড়াতে পারছেন না। আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলব, আপনি রোজা-রমজানের দিনেও স্বভাবগত মিথ্যাচার পরিত্যাগ করতে পারেননি। দেশেনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ কেনো, নুন্যতম চিকিৎসাটুকুও পাচ্ছেন না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েই দেশনেত্রীকে আজীবন জেলে রাখার কথা বলেছেন তাই বেগম জিয়া তাদের কাছ থেকে সুচিকিৎসা কখনো পাবেন না। রিজভী বলেন, দেশের হাসপাতালে যদি সর্বোচ্চ চিকিৎসা হয় তাহলে মন্ত্রীরা বিদেশে যান কেন? সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় হত্যার ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে রিজভী বলেন, বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তো চিকিৎসার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিই নেই। সেখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসা হলে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের চিকিৎসা দিতে কেন সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়? তারা কারাবন্দি থাকাবস্থায় স্কয়ার ও ল্যাবএইডে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল কেন? আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলবো-আপনি রোজা-রমজানের দিনেও স্বভাবগত মিথ্যাচার পরিত্যাগ করতে পারেননি। দেশনেত্রীর সর্বোচ্চ কেন, তিনি নূন্যতম চিকিৎসা সেবাটুকুও পাচ্ছেন না। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, তার (খালেদা জিয়া) জামিনে বাধা সৃষ্টি করেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকারের স্বস্তি মিলছে না। কারণ গণতন্ত্রকে সংকটাপন্ন রেখে স্বস্তি পাওয়া যায় না। চারদিকে লুটপাটের মহোৎসব চলছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সমাজের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আইনের শাসন না থাকায় মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। দেশের কোটি কোটি কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী হতাশায় নিমজ্জিত। লোকসানের কবলে পড়ে এখন তারা প্রায় সর্বশান্ত। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসেও মানুষের জীবনে সামান্য স্বস্তি নেই। রাষ্ট্র কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ তাদের পুরনো ঐতিহ্যের মাধ্যমে দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ায় মানুষ তাদের থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই বেগম জিয়া সরকারের প্রতিহিংসায় কারাবন্দি থাকলেও এখনও তিনি দেশের মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তার আপোষহীন মনোভাব সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তাইতো আওয়ামী নেতাদের এত জ্বালা। সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ দফরত সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।