ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত ৩০ জুলাই

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সময় পেয়েছে আসামিপক্ষ। আসামির এক আইনজীবীর সময় বাড়ানোর আবেদনে সাড়া দিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শুনানির জন্য ৩০ জুলাই পরবর্তী দিন ঠিক করেছে। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী মিজানুর রহমান ও আবদুস সোবহান তরফদার। পরে রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, গত ২৯ এপ্রিল ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠনের উপর শুনানি শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই দিন আসামিপক্ষের শুনানির জন্য গত মঙ্গলবার দিন রাখে। কিন্তু ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল গতকাল পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু গতকাল অন্য এক আইনজীবী মিজানুর রহমান আসামি ওয়াহিদুল হকের পক্ষে নিয়োজিত হয়েছেন জানিয়ে শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময়ের আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর তিনি পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব পান এবং এরপর গত শতকের শেষ দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন।
প্রসিকিউশনের ভাষ্য, ‘পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা, গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক।’
২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়। সে অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত কাজকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এমন অভিযোগ করলে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে গত বছরের ২৫ এপ্রিল দুপুরে গুলশানের বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্র, হত্যা, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ চলতি বছর ৪ মার্চ আমলে নিয়ে ২৫ মার্চ শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগানের গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে আসামি ওয়াহিদুল হকের জড়িত থাকার তথ্য এসেছে তদন্তে। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে কমিশন পান। পরে তাকে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে বদলি করা হয়।
১৯৭০ সালের মার্চে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনা নিবাসে স্থানান্তরিত হলে ওয়াহিদুল হকও সেখানে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন তিনি। ওই বছরই তিনি বদলি হয়ে আবার পাকিস্তানে (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল। পরের বছর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পাকিস্তান আমলের এই সেনা সদস্য। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াহিদুল হককে পরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই দায়িত্ব শেষে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *