নিজস্ব প্রতিবেদক : এবারের ঈদ যাত্রা নিয়ে শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে তিনি বাসমালিকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, বলেছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে যানজট সৃষ্টি করবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ঈদযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি সভায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ঈদ উপহার হিসেবে দেশবাসীকে দুই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে সেতু, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনের ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সহজ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাচ্ছে। টাঙ্গাইল মহাসড়কে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস হওয়ায় উত্তরবঙ্গের চিরায়ত যানজট কমেছে। এটা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চার লেন প্রকল্পের বেশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের ফান্ডের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তাই খুব শিগগির প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের কাজ চলায় এ অংশে কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি সড়কে গাড়ি শৃঙ্খলা মেনে চলাচল করে, তাহলে এখানেও ভোগান্তি হবে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জয়দেবপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ঈদে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া ঈদের সময়টাতে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হবে। যেন গাড়ি নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। ঈদের সময় ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে ও পরে মহাসড়কে ট্রাক ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন যাত্রীবাহী বাস নিরাপদে চলাচল করতে পারে। ঈদ উপলক্ষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রাত জেগে, এমনকি প্রয়োজনে ঈদের দিন সড়কে থেকে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনগণ তথা দেশের স্বার্থে কাজ করবেন। মানুষের বাড়ি ফেরা নিরাপদ করবেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব। ঈদের সময় লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি সড়কে না নামানোর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি বাস মালিকদের অনুরোধ করবো, আপনারা এসব বন্ধ করবেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে যানজট সৃষ্টি করবেন না এসময় সেতু সচিব নজরুল ইসলামসহ সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে আগামি জুনের মধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে নবম ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি বলেন, নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আসলে বিষয়টি আরও আগেই আমরা সমাধানে যেতে পারতাম। আরও আগেই আমরা ঘোষণা দিতে পারতাম। আমাকে সভাপতি করার পরপরই আমি একটি মিটিং করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেদিন আমরা নোয়াবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মূলত আলোচনা করেছি। এর পরপরই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আলোচনার অগ্রগতি জানিয়ে কাদের বলেন, একটি বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি- এ বিষয়টিকে আর ঝুলিয়ে রাখা সমীচীন হবে না। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সমাধান করে সবার কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটা ঘোষণা দেব। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের বিষয়ে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব। বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে ১২ জুন বেলা ১১টায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা জানিয়ে কাদের বলেন, বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে সেই যৌথ সভাটি আমরা করব। সেদিন সকল পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। জুন মাসের মধ্যে, এই অর্থবছরের মধ্যে এই রোয়েদাদ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত আমাদের ঘোষণা পেশ করব, এটাই মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অংশ নেন। ২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গতবছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।