স্বর্ণার প্রতারণায় দিশেহারা ২৮

অপরাধ এইমাত্র রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : মডেল পরিচয়ে ফেসবুকে প্রেম করতেন প্রবাসীদের সঙ্গে। কখনো স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স আবার সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে নিতেন টাকা। পরে করতেন বিয়েও। কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমিও। এমনই একটি প্রতারক পরিবার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।


বিজ্ঞাপন

প্রতারিতদের দাবি, ২৮ জনের সাথে এভাবে প্রতারণা করে বিয়ে করে রোমানা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।


বিজ্ঞাপন

রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। নিজেকে কখনো মডেল, কখনো অভিনেত্রী পরিচয়‌ দিতেন। খুলতেন ভিন্ন ভিন্ন ফেসবুক আইডি‌। আপলোড করতেন রগরগে (আপত্তিকর) সব ছবি। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। তারপর কখনো স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ আবার কখনো স্বামীহীন সংসারে আর্থিক অনটনের কথা বলে প্রবাসী ওইসব প্রেমিকদের কাছ থেকে নিতেন টাকা। ঠিক একইভাবে কখনো ফ্ল্যাট কেনা আবার কখনো গাড়ি কেনার নাম করে রোমানা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন সময়ে নেন আড়াই কোটি টাকা।

প্রতারিত হওয়া প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সে আমার সাথে প্রথমে ভাল সম্পর্কে করে। এরপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। গেলে তারা আমাকে কিছুটা একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার খারাপ ছবি তুলে নেয় ও আমার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। তার মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি আর সবই আমার কিনে দেওয়া। আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বললেও তা মিথ্যা। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

এরপর বিয়ের জন্য দেশে এনে জুয়েলকে কিছুদিন নিজের বাসায় আটকে রাখেন রোমানা। করেন বিয়েও। এসব শোনার পর নিজের আগের স্ত্রীর সাথে জুয়েলের ছাড়াছাড়িও হয়। রোমানা হঠাতই একদিন সুযোগ বুঝে ধারণ করেন জুয়েলের অন্তরঙ্গ নানা মুহূর্তের ছবি। এরপর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রোমানা জোর করে স্ট্যাম্পে জুয়েলের সাক্ষর রেখে জায়গা জমি হাতিয়ে নেন। এরপর রোমানাও জুয়েলকে ডিভোর্স দেন।

এভাবেই বিয়ের নামে প্রতারণা করে রোমানা ২৮ জন প্রবাসীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতারিতরা। আর পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সাথে একই প্রক্রিয়ার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, রোমানা, তার মা, তার ভাই ও ভাইয়ের বউ ও রোমানার ছেলে তারা সবাই এই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তুলে তারা। এরপর টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এ ব্যাপারে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় প্রতারক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।