বিএসটিআইয়ের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই একই প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের পণ্যকে ভালো বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে আগের পরীক্ষা ভুল ছিল নাকি পরেরটি? তবে বিএসটিআইয়ের দাবি, নতুন করে উৎপাদিত পণ্য ছিল মানসম্পন্ন।
গত ১২ মে হাইকোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্যকে নিম্নমানের বলে জানায় বিএসটিআই। এই পণ্যগুলো বাজার থেকে তুলে দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলাও হয়েছে। যেসব পণ্যে ভেজাল পাওয়া যায় তার মধ্যে আছে তীর, পুষ্টি ও রূপচাঁদা সরিষার তেল। ওষুধের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় নামা এসিআইয়ের লবণ ও ধনিয়ার গুঁড়ায় মিলে ভেজাল। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী বাজার দখল করা প্রাণ কোম্পানির হলুদের গুঁড়া, কারি মশলা ও লাচ্ছা সেমাইও গুণগত মানে উত্তীর্ণ নয় বলে প্রমাণ মেলে। ভেজালের তালিকায় ছিল ড্যানিস ফুড কোম্পানির কারি মশলা, ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের লাচ্ছা সেমাই, মোল্লা সল্ট লবণ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল ঘি, সান চিপসের নাম। ডানকানের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের পানিও পানের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে হাজির হচ্ছে না ‘নিম্নমানের’ খাদ্য উৎপাদনকারী কর্মকর্তারা। এর মধ্যেই বিএসটিআই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। এগুলো হলো: এসিআইয়ের লবণ, প্রাণের কারি পাউডার ও নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডল নুডলস। তবে এই সংখ্যাটি ১৫ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (মান) রিয়াজুল হক জানান, উপরোক্ত তিনটির বাইরে রয়েছে ওয়েল ফুড ও মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, আরার ডিউ ড্রিংকিং ও দীঘির ড্রিংকিং ওয়াটার। এগুলো আবার পণ্য বাজারে আনতে পারবে।
কীভাবে পণ্যগুলো ভালো হয়ে গেল- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, যে কারণে এসব পণ্যের নিষিদ্ধ করা হয়, আমরা তাদরে মান উন্নয়নের সুযোগ দিয়েছি। তারা মান উন্নয়ন করতে সমর্থ হয়েছে। আমরা পুনরায় পরীক্ষা করেছি।
তবে বিএসটিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সোচ্চার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ হতে না হতেই হুটহাট পুনর্মূল্যায়ন তো বিএসটিআইকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
এই বিষয়টি বিএসটিআই নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক ফারুক বলেন, জনগণ কী ভাবল, না ভাবল এটা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাথাব্যাথা নেই। এরা এসব নিয়ে কখনই ভাবে না।
পুরো প্রক্রিয়াটির দ্রুততা নিয়ে উঠা প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক বলেন, আমাদের বিবেচনায় যে পণ্যগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে সেগুলো কিন্তু সবগুলো পেরামিটারেই খারাপ ছিল না। ১০টি পেরামিটারে যাচাই করলে হয়তো দুই বা একটি জায়গায় তাদের ত্রুটি পাওয়া গেছে। সেগুলো তারা ঠিক করেছে। আমরা পুনরায় পরীক্ষা করে পণ্যগুলোর মান ঠিক পাচ্ছি।
এই পণ্যগুলো আগেও বিএসটিআই সার্টিফাইড ছিল। কিন্তু বাজারে ছাড়া পণ্যের মান ঠিক রাখতে পারেনি তারা। এখন মান উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট নিয়ে পুনরায় বাজারে নিম্নমানের পণ্য ছাড়বে না- এই নিশ্চয়তা কী- এমন প্রশ্নে রিয়াজুল হক বলেন, বিএসটিআইয়ের এই পরীক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বাজার থেকে প্রতিনিয়ত সেম্পল কালেকশন করে পরীক্ষা করব। যদি পণ্যের মান ঠিক না থাকে তাহলে আবারও এসব পণ্য নিষিদ্ধ করা হবে।
তবে বিএসটিআই কর্মকর্তার এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন অধ্যাপক ফারুক। তার আশঙ্কা দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলের পেছনে কোনো অনৈতিক লেনদেনের সম্পর্ক থাকতে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের পুনর্মূল্যায়ন হয়ে থাকে টাকার বিনিময়ে। ঔষধ প্রশাসনেও এমন ঘটনা দেখেছি। যারা পুনর্মূল্যায়নের করালেও বাজারে পরবর্তীতে সাব স্ট্যান্ডার্ড পণ্য বাজারজাত করে থাকে। এই ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না এটা বলা কঠিন।
মামলা শেষ হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্য বাজারে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শাস্তি আর হলো কোথায় বরং এরাতো পুরস্কৃত হলো। বাজার থেকে এখনো এদের নিষিদ্ধ পণ্যই প্রত্যাহার ঠিকমতো হয়নি। এর মধ্যে বাজারজাত করার অনুমতি মিলল। এটা হতেই পারে না। মামলাটির মীমাংসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *