নমুনা পরীক্ষায় বাড়ছে ভোগান্তি : করোনায় রেকর্ড মৃত্যু

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাজধানীর দুই এলাকা

 

এমএ স্বপন : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মোস্তফা-নাজমা দম্পতি। একজনের বেড়েছে শ্বাসজনিত সমস্যা অন্যজনের দেখা দিয়েছে কোভিডের অন্য আরো উপসর্গ। কিন্তু দু’দিন ধরে চেষ্টা করেও পারছেন না নমুনা পরীক্ষা করাতে। বেড়েছে ভোগান্তি।
দেশে এখন রেকর্ড পরিমাণ পরীক্ষা হলেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নমুনা দিতে আসাদের ভোগান্তিও। নাম নিবন্ধন করাতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। একাধিক কেন্দ্র ঘুরেও সম্ভব হচ্ছে না নমুনা দেয়া। যারা পারছেন তাদের অভিজ্ঞতাও তিক্ত।
এ বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, সক্ষমতার তুলনায় নমুনা দেয়ার চাপ বাড়ার কারণেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। এদিকে তৃতীয় দিনের মতো চলছে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কর্মসূচি।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসে দেশে একদিনে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এর আগে গত শনিবার সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৮১৯ জন।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ২৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৬টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ লাখ ২ হাজার ৮৬৫টি। এখন পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২১২ জন। এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
নতুন মৃত্যু ৭৮ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই রয়েছেন ৪৭ জন। চট্টগ্রামে ২০, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ৪, সিলেটে ২ এবং রংপুরে ১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ, বাকি ২৫ জন নারী। এছাড়া মোট মারা যাওয়া ৯ হাজার ৭৩৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ২৭৯ জন, নারী ২ হাজার ৪৬০ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ৪৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১৬, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৬ এবং ১০ বছরের চেয়ে কম বয়সের ১ জন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাজধানীর দুই এলাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এরইমধ্যে শনাক্ত ও মৃত্যু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। করোনাভাইরাসে দেশে একদিনে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এর আগে গতকাল শনিবার সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৮১৯ জন। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হঠাৎ করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, রাজধানীর দুটি এলাকায় সর্বাধিক সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এলাকা দুটি হলো মিরপুরের রূপনগর এবং মোহাম্মদপুরের আদাবর।
আইইডিসিআর বলছে, ওই দুই থানা এলাকা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া আরও ১৭টি থানা এলাকায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের উপরে।
আইইডিসিআর জানায়, গত ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪ হাজার ৩৩২টি পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১০৩ জন। শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৬ হাজার ৭৭১টি পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৪৩ জন। শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ঢাকায় রূপনগর থানা এবং আদাবর থানা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। রূপনগরে শনাক্তের হার ৪৬ শতাংশ এবং আদাবরে ৪৪ শতাংশ।
আইইডিসিআর কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরও জানা যায়, ঢাকার আরও ১৭টি থানা এলাকার করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপর অবস্থান করছে। ২৩টি থানায় ২০ শতাংশের ওপরে এবং ৭টি থানায় ১১ শতাংশের ওপরে।
১১ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে আছে তেজগাঁও, উত্তরা পশ্চিম থানা, ভাসানটেক, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং বিমানবন্দর থানা এলাকা।
২১ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আছে শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাহানপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাড্ডা, বনানী, উত্তরখান, শেরে বাংলা নগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণ খান, খিলক্ষেত, কদমতলি, উত্তরা পূর্ব থানা, পল্টন থানা এলাকা।
৩০ শতাংশের ওপরে আছে রূপনগর, আদাবর, শাহ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম ও খিলগাঁও।


বিজ্ঞাপন