উত্তপ্ত হবে সংসদ

আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় ঢাকা রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন পর দেশের জনগণ এবার দেখতে পেতে পারে উত্তপ্ত এক জাতীয় সংসদ। এবারের সংসদ অধিবেশনে অন্যান্য দলগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চেপে ধরার পরিকল্পনা এঁটেছে বলে জোর গুঞ্জন চলছে।
এদিকে আগামী ১১ জুন থেকে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৩ জুন সংসদে বাজেট দেওয়ার কথা। এবার বাজেট অধিবেশনে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার এবং বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগকে সমালোচনাবিদ্ধ করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে সংসদের বিরোধী দলগুলো।
সূত্র জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধীদলের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে একটা সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছে।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের সংসদ সদস্যদেরকে বলেছেন, সরকার যে সমস্ত বিষয়গুলোতে ইতিবাচক কর্মকা- করেনি সে সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সমালোচনা করতে হবে।
অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনসহ বিএনপির ছয়জন, গণফোরামের দুইজন ছাড়াও ১৪ দলের দুটি শরীক দল জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিও বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিরোধীদলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব ইস্যু সামনে নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে- কৃষকদের দুরাবস্থা, ধানের সঠিক মূল্য, ভেজাল বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে আকস্মিকভাবে বদলি করা, চাঁদা বিভ্রাট, ঋণ খেলাপিদের বিভিন্নরকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া এবং নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি। এই ইস্যুগুলোকে নিয়ে সংসদকে উত্তপ্ত করতে চায় বিরোধী দলগুলো।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, গত সংসদের থেকে এই সংসদের পার্থক্য হলো, গত সংসদে জাতীয় পার্টি একটা অদ্ভুত অবস্থায় ছিল। জাতীয় পার্টির অনেকেই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। এজন্য আমরা চাইলেই যথাযথভাবে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে পারিনি। কিন্তু এবার জাতীয় পার্টি বিরোধীদল হিসেবেই সংসদে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, জাপা সবসময় সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার নীতিতে বিশ্বাসী। যে সমস্ত বিষয় জনগণের জন্য ইতিবাচক নয় সেগুলো আমরা সংসদে তুলে ধরবো। যদিও এবারের অধিবেশন বাজেট অধিবেশন। কিন্তু বাজেট অধিবেশনের ফাকে ফাকে এবং বাজেট বক্তৃতায় এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সমালোচনা করা হবে বলেও তিনি ইঙ্গিত করেন।
অন্যদিকে বিএনপির যে ছয়জন সংসদ সদস্য এবার জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণ করছেন, তাদের প্রধান দাবি হবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু। যদিও তারা এ বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দলগুলোর সমর্থন পাননি।
কিন্তু সদ্যই সংরক্ষিত কোটায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটিই তিনি আসন্ন অধিবেশনে প্রধান ইস্যু হিসেবে উপস্থাপন করবেন।
গণফোরামের দুজন সংসদ সদস্য সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মোকাব্বির খান কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার বিষয়, দূর্নীতির বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করবেন।
এ ব্যাপারে সুলতান মুহাম্মদ মনসুর বলেছেন, জনগণের ইস্যুতে সবগুলো বিরোধীদল ঐক্যবদ্ধ হতেই পারে। সেটা জাতীয় সংসদের মধ্যে আমরা আলোচনা করে ঠিক করতে পারবো। যে সমস্ত বিষয়ে গণদাবি সেটা যদি জাতীয় পার্টি উত্থাপন নাও করে সেটা গণফোরাম উত্থাপন করবে।
অন্যদিকে ১৪ দলের দুটি শরীক দলকে এবার জাতীয় সংসদে ভিন্ন অবয়বে দেখা যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন বলেছেন, কৃষকরা যে ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, এটা জাতীয় ইস্যু। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অবশ্যই জাতীয় সংসদে কথা বলবো। এছাড়াও নুসরাত হত্যাসহ নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক ইস্যুগুলো সংসদে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি মনে করেন, ১৪ দল থাকা অবস্থায় এই ইস্যুগুলো সংসদে তুলে ধরা দোষের বিষয় নয়। এর ফলে ১৪ দলের ঐক্যের কোনো ক্ষতি হবে না।
অবশ্য বিরোধী দলের এই সমালচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আমরা চাই প্রাণবন্ত সংসদ। সংসদই হোক সমস্ত কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদে বিরোধীদলের সংখ্যা যত কমই হোক না কেন আমরা তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা জানাবো এবং তাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবো।
তিনি বলেন, বিরোধীদল যদি কোনো যৌক্তিক ইস্যু উপস্থাপন করে তাহলে অবশ্যই সেই ইস্যুটা শোনা হবে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটা বাজেট অধিবেশন। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি এবং নিয়ম মেনে বিরোধোদল যে কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে পারবে।
এদিকে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে কথা বলতে হলে বিধি মেনেই বলতে হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
তিনি বলেন, যেহেতু ৩০ জুনের মধ্যে বাজেট পাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই আমরা ২৭ বা ২৯ জুনের মধ্যে সাধারণ আলোচনা শেষ করবো। তবে সব কিছু কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ যারাই সংসদে কথা বলতে চায় তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে কার্য প্রণালী বিধি মেনেই কথা বলতে হবে। এর বাইরে কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানান ডেপুটি স্পিকার।
তিনি আরও বলেন, কেউ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে কথা বলতে চাইলে সেই সুযোগ তাকে দেওয়া হবে না।
সবকিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিন পর একটা কার্যকর ও উত্তপ্ত সংসদের আভাস দিচ্ছে আসন্ন বাজেট অধিবেশন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *