সেতু রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ১১ কোটি টাকার প্রকল্প ২৩৫ কোটিতে উন্নীত

অন্যান্য অর্থনীতি জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে সংযোগ সড়কসহ ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’ রক্ষায় কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনের প্রি-একনেকের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন লাভ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক অধিদফতরের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সভায় কিছু পর্যবেক্ষণসহ প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ ভাঙনরোধ প্রকল্পটি গত ১০ জুন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১১ কোটি টাকা। খুব শীঘ্রই এ-সংক্রান্ত সংশোধিত ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা না হলে যেকোন সময়ে দক্ষিণাঞ্চল দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রমতে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক অধিদফতরের এই সেতু ও সংযোগ সড়কটি রক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পটি ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসেবে এখন বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউএম) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সেতুটির বরিশালের প্রান্তে সুগন্ধা নদীর বামতীর ঘেঁষে উজানে একটি ‘কনকেভ ব্যান্ড’ তৈরি হয়েছে। ফলে নদীর অপরপ্রান্তে ¯্রােতের চাঁপ অত্যন্ত বেশি। পাশাপাশি নদীর অন্যপ্রান্তের ডানতীর ঘেঁেষ জেগে ওঠা চর ক্রমান্বয়ে বামতীরের দিকে বর্ধিত হচ্ছে। তাই নদীর ‘কনভেন্স ক্যাপাসিটি’ হ্রাস পেয়ে সেতুর পূর্বাংশের ভাঙনকে ত্বরান্বিত করছে। সেতুর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙনরোধে নদীতীর রক্ষার পাশাপাশি চর অপসারণের সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের আলোকে সেতু এলাকায় নদীর বামতীরের উজানে এক হাজার ৮০০ মিটার ও ভাটিতে ২০০ মিটার এবং ডানতীরের উজানে ৭৬৫ মিটার ও ভাটিতে এক হাজার মিটার নদীতীর সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পর এর ওপর সিসি ব্লক সন্নিবেশ করে নদীশাসনের পাশাপাশি সেতুটির উজানে নদীর বাঁকে আট লাখ ঘণমিটার পলি অপসারণের মাধ্যমে নদীর বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়কপথে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় কুয়েত সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের শিকারপুর ও দোয়ারিকা নদীর ওপর দুটি সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু সেতু দুটি নির্মাণের পরই দোয়ারিকা সেতুর পূর্বপ্রান্তে অর্থাৎ বরিশালপ্রান্তে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমদিকে সড়ক অধিদফতর বিষয়টি নিয়ে খুব একটা মনোযোগ না দিলেও ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে তাদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তবে গত ১০ বছরেরও অধিক সময় দোয়ারিকা সেতুর বরিশালপ্রান্তের সংযোগ সড়কের দিকে নদীভাঙন এগিয়ে আসলেও মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ত্বরিত বাস্তব কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। তিন বছর আগেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সেতু এলাকার ভাঙনরোধে নকশা প্রণয়নসহ প্রাক্কলন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সভায় ভাঙনরোধে প্রকল্পটির অর্থ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসেবে তা বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছে। তখন ‘জরুরি ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম’ গ্রহণের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দুই কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। গত বছর ভাঙন পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সড়ক বিভাগ থেকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু ‘জিও স্যান্ড ব্যাগ’ ফেলে আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবেলা করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন বর্ষায় দোয়ারিকা সেতুর এবাটমেন্ট ও সংযোগ সড়ক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিকল্পনা কমিশন প্রি-একনেকের সভায় ভাঙনরোধ প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়টি অনুমোদিত হলে আগামি দুই মাসের মধ্যে তা একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামি অর্থবছরের এডিপিভুক্ত হয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই দোয়ারিকা সেতুর ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রমের বাস্তব কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *