ঢাকা ফেরত যাত্রীদের চাপ বরিশাল প্রতিবেদক : ঈদ-উল ফিতরের ষষ্ঠদিনে বরিশাল নৌ বন্দরে রাজধানীমুখি যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায় দ্বিগুন। ঈদের গত পাঁচ দিনের চেয়ে কয়েকগুন বেশি যাত্রীর সমাগম হওয়ায় সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার লঞ্চগুলোতে যাত্রী ভীরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। এদিকে যাত্রী বাড়লেও বাড়েনি লঞ্চের সংখ্যা। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে সরাসরি ২৩টি বিলাশবহুল লঞ্চ থাকা সত্বেও গত সোমবার ১৭টি যাত্রীবাহী নৌ-যান বিশেষ সার্ভিস দিয়েছে। যারমধ্যে তিনটি দিবা সার্ভিসের ওয়াটার বাস। পর্যাপ্ত লঞ্চ না থাকায় অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠছেন রাজধানী মুখি যাত্রীরা। ফলে লঞ্চের ডেক থেকে শুরু করে কেবিনের বারান্দায়ও যাত্রীদের ভীর পরেছে। যদিও লঞ্চ মালিকদের দাবী যে যাত্রী রয়েছে তা রাত্রিকালীন ১৪টি লঞ্চেই বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া যাবে। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন-অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোন সুযোগ নেই। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লোড লাইন দেখে লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়া হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর মোঃ কবির হোসেন বলেন, গত ৬ জুন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ঈদ ফেরত যাত্রীদের বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু হয়। গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো ছিলোনা। থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ তুলনামুলক কমছিলো। ঈদের পঞ্চম দিন থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো হওয়ায় যাত্রীদের চাঁপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ধারাবাহিকতা ষষ্টদিনেও অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকেই যাত্রীরা রাজধানীর উদ্দেশ্যে বরিশাল নৌ বন্দরে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নৌ বন্দর যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে নদী বন্দরে লঞ্চ ও পল্টুনে যাত্রীদের কারণে তিল ধরানোর ঠাঁই ছিলোনা। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত্রিকালিন সার্ভিসের ১৪টি লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি লঞ্চ বার্দিং করা বিআইডব্লিউটিএ’র জেটিতে। বাকি চারটি লঞ্চ জেটির অভাবে অন্য লঞ্চগুলোর পেছনে নোঙর করেছে। লঞ্চগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা উঠছে। এর আগে বিকেলে গ্রীন লাইন কোম্পানির দুটি এবং নিজাম শিপিং লাইন্সের মোট তিনটি ওয়াটারবাস বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঝালকাঠি, বরগুনাসহ বিভিন্ন রুটের আরও ছয়টি লঞ্চ বরিশাল ভায়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। লঞ্চ যাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, চাকরির সুবাধে ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই গৃহকর্তারা আগে ভাগেই চলে গেছেন। এখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। যাত্রীরা আরও জানান, ভীড় বেশি হলেও কোন সমস্যা নেই। শুধু নদী বন্দরে পর্যাপ্ত জেটি না থাকা এবং ভ্রাম্যমান হকারদের কারণেই তাদের (যাত্রী) সমস্যায় পরতে হচ্ছে। এ সবের কারণে স্বাভাবিক যাত্রা ব্যহত হচ্ছে। যাত্রীদের দাবী বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে পর্যাপ্ত লঞ্চের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও সিন্ডিকেট করে মাত্র ১৪টি লঞ্চ ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচল মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই যাত্রীদের চাঁপ কমছিলো। কিন্তু তার পরেও অতিরিক্ত লঞ্চ চলেছে। তাই মালিকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারনেই লঞ্চ মালিকরা স্ব-ইচ্ছায় লঞ্চ কমিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে যাত্রীদের চাঁপ বাড়ার সাথে সাথে নৌ-বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে নজিরবিহন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাব-৮, মেট্টোপলিটন পুলিশ, ডিবি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা নদী বন্দরে যাত্রীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন।
অতিরিক্ত চাপে যাত্রীর মৃত্যু: নৌ-বন্দরে অতিরিক্ত যাত্রীদের ভীড়ে আবদুল হাই (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ লঞ্চ যাত্রী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তিনি (আব্দুল হাই) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ত্যাগাচিয়া গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের পুত্র। বরিশাল নগরীর গোরস্থান রোডস্থ শ^শুর বাড়ি থেকে গত ৯ জুন সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিনি পারাবত-১২ লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, ঈদের পঞ্চম দিনেও নৌ-বন্দরে যাত্রীদের ভীড় ছিলো। ওই যাত্রী তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে পারাবত-১২ লঞ্চে উঠে নিচ তলায় ডেকে অবস্থান করেন। কিছুক্ষণ পরে লঞ্চের ভেতরেই তিনি হঠাৎ করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।