নিজস্ব প্রতিবেদক : নাইকো দুর্নীতি মামলার আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনের শুনানি হবে হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও মওদুদ আহমদ; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৬ মে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রিট আবেদনের শুনানিতে নাইকো মামলা আমলে নেওয়ার আদেশ এবং আদালত স্থানান্তরের গেজেটের কপি হলফনামা আকারে জমা দিতে বলেছিল খালেদার আইনজীবীদের। এর ধারাবাহিকতায় এ জে মোহাম্মদ আলী মঙ্গলবার নাইকো মামলা আমলে নেওয়ার আদেশের কপি হলফনামা আকারে জমা দেন। কিন্তু আদালত স্থানান্তরের গেজেটের কপি পাননি জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে বিশদ শুনানি প্রয়োজন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ সময় বলেন, আজ এই ভ্যাকেশন বেঞ্চের শেষ কার্যদিবস। আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন। মওদুদ আহমদ এ সময় বলেন, চাইলে আপনারা রুল দিতে পারেন। পরে আদালত এই রিট মামলা শুনানির জন্য হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী এই বেঞ্চের আদেশসহ মামলার নথি এখন হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় যাবে। আদালতের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কোনো একটি বেঞ্চে তা শুনানির জন্য উপস্থাপন করবেন। আদেশের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, এটা (আদালত স্থানান্তর) এখন বিচারাধীন বিষয়। সুতরাং এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে মামলার কার্যব্ক্রম চলতে পারে না। অন্যদিকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, এটা সাবজুডিস মেটার কীভাবে, রুলও তো হয়নি। বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত না হলে কোনো মামলার বিচারই বন্ধ থাকে না। আমি মনে করি বিচারিক কার্যক্রম চলতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ইতোমধ্যে আগের আদালতে দুই দিন শুনানি করেছেন। অথচ তারা এটা তারা উচ্চতর আদালতে গোপন করেছেন। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত কারাগারে। তার বিরুদ্ধে নাইকোসহ অন্য কয়েকটি মামলার বিচারও সেখানেই চলছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, সুস্থ হলে খালেদাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হবে। এরপর খালেদার বিচারে আদালত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি গেজেট জারি হলে প্রথমে উকিল নোটিস পাঠিয়ে পরে হাই কোর্টে আসেন খালেদার আইনজীবীরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানি পর্যায়ে আটকে আছে।