সিগারেটে করহার অপরিবর্তিত রাখা জনস্বাস্থ্যবিরোধী সিদ্ধান্ত: প্রজ্ঞা

অন্যান্য অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা বানিজ্য বিবিধ রাজধানী স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে শলাকা প্রতি মাত্র ২০ পয়সা। অর্থাৎ, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ এ সময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ধূমপায়ীদের প্রায় ৭২ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞা বলেছে, বাজেট প্রস্তাবনায় মূল্যস্তরভেদে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত আয় বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিড়ির শলাকা প্রতি ৬ পয়সা দাম বাড়ানো এর ব্যবহার কমাতে কোনও ভূমিকাই রাখবে না। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার এই বাজেট প্রস্তাবনা চরম হতাশাজনক এবং একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিরোধী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বাড়িয়ে ৩৭ টাকা নির্ধারণ এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এটি খুবই হতাশাজনক। এর ফলে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র ২০ পয়সা। জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এই অতি সামান্য মুল্য বৃদ্ধিতে নি¤œ আয়ের মানুষের ধূমপানের প্রবণতায় কোনও পরিবর্তন হবে না। ধূমপান শুরু করতে পারে এমন তরুণ প্রজন্মকে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে শুধু মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা। সরকারের এই পদক্ষেপে বিগত বছরের তুলনায় মূল্যস্তরভেদে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। ফলে, বিশেষত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কখনও সম্ভব নয়। সিগারেটের স্তরসংখ্যা হ্রাস ও সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রচলনের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও এমন কোনও নির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। স্তরসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার সিগারেট স্তর পরিবর্তনের সুযোগ থেকে যাবে।
প্রজ্ঞার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ির ব্যবহার বন্ধে একাধিকবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা পূর্ববর্তী বাজেটের আগে দেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিফলন আগেও দেখা যায়নি এবং এ বছরের বাজেট ঘোষণাতেও নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির মূল্য দুই বছর পর মাত্র ১ দশমিক ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি খুবই নগণ্য। এতে প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বাড়বে মাত্র ৬ পয়সা। বাজেটে বিড়ির সম্পূরক শুল্ক বিগত তিন বছর অপরিবর্তিত রাখার পর ৩০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিলের জন্য তামাকবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি দীর্ঘদিনের। তাদের দাবি মেনে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩০ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সম্পূরক শুল্ক হবে ৫০ শতাংশ। ওজনের উপর ভিত্তি করে জর্দা ও গুলের মূল্য নির্ধারণ করার ফলে এসব পণ্য থেকে কর আদায়ের জটিলতা কিছুটা হলেও কম হবে এবং আদায়কৃত করের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। সংখ্যাগরিষ্ঠ তামাক ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় বলে মনে করে প্রজ্ঞা।
অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের বিদ্যমান ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক তুলে দেওয়ার পাশপাপাশি প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্য রফতানি উৎসাহিত করতে শূন্য শতাংশ রফতানি শুল্ক প্রস্তাবিত বাজেটেও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং চরম জনস্বাস্থ্যবিরোধী পদক্ষেপ। এতে বাংলাদেশকে তাদের উৎপাদন ভূমি হিসেবে ব্যবহার করায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
অন্যান্য কর প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব তামাক কোম্পানির বিদ্যমান ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর বহাল রাখার পাশাপাশি সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ সারচার্জ বহাল রাখা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *