নিজস্ব প্রতিবেদক : দোকান বড় করতে আট মাস আগে এক রাতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচতলার একটি পিলার ভেঙে ফেলা হয়। এতে জাতীয় মসজিদের মূল ভবন ঝুঁকিতে পড়ে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। কিন্তু এজন্য দায়ী দোকানমালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো একটি তদন্ত কমিটির প্রধান মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালককে বরখাস্ত করে বিতর্কে পড়েছেন ইফার মহাপরিচালক।
এই অবস্থায় মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে সামীম আফজালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন অবহিত করা হবে না, তার কারণ দর্শাতেও বলা হয়েছে।
৯ জুন এই নোটিশ পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ইফার মহাপরিচালক বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালককে বরখাস্তের যে আদেশ দিয়েছেন, তা অবৈধ ও ক্ষমতাবহির্ভূত।
সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, তিনি শিগগিরই নোটিশের জবাব দেবেন। তাঁর দাবি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা তাঁর এখতিয়ারের মধ্যে আছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইফার উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, ইফার নিয়ন্ত্রণাধীন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নিচতলাজুড়ে কয়েক শ দোকান রয়েছে। মসজিদের নিচতলার মাঝ বরাবর ‘এইচ-৬’ নামে একটি দোকানের বরাদ্দ পেয়েছেন শায়লা আক্তার। তাঁর স্বামী সোহরাব হোসেন গাজী মূলত দোকানটি দেখাশোনা করেন। গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাতে সোহরাব হোসেন মসজিদের প্রায় ২৫ বর্গফুট আয়তনের একটি লোড বিয়ারিং পিলার (ভর বহনের স্তম্ভ) লোকজন দিয়ে ভেঙে তা অপসারণ করে ফেলেন। একই সঙ্গে ১৫ ইঞ্চি পুরু আরেকটি লোড বিয়ারিং দেয়ালও ভেঙে ফেলেন। নৈশপ্রহরীদের মাধ্যমে ঘটনাটি পরদিন জানতে পারে ইফার মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ। ওই দিনই মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদার কৈফিয়ত তলব করে শায়লা আক্তারকে চিঠি দেন। এরপর শায়লা আক্তার চিঠির জবাবে দাবি করেন, তাঁর দোকানের ভেতরে কোনো পিলারই ছিল না। তাঁর এই জবাবে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়নি। এরপর গত ২৪ অক্টোবর ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক নুরুল হক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
দাপ্তরিক নথিপত্রে দেখা যায়, পিলার অপসারণের ঘটনায় ইফার মহাপরিচালক গত নভেম্বরে এবং মার্কেট বিভাগ অক্টোবরে আলাদা তদন্ত করে। দুই তদন্তেই পিলার অপসারণের সত্যতা পাওয়া যায় এবং অভিযুক্ত দোকানমালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অপসারণ করা পিলারটি পুনর্নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ভবন ধসের ঝুঁকি এড়াতে ইফা ৪ জুন পিলারটি পুনর্নির্মাণ করলেও দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ইফা সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে ইফার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আলোচনা করতে চান। কিন্তু বিষয়টি ২৯ মে ইফার সর্বশেষ সভার আলোচ্যসূচিতে না থাকায় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন ওই সভা থেকে পরিচালক মহিউদ্দিনকে বের হয়ে যেতে বলেন মহাপরিচালক। পরদিন ৩০ মে মহিউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন মহাপরিচালক। তাতে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ‘জনৈক ব্যক্তির’ দায়ের করা অভিযোগের কথা বলা হয়।
মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু অখ্যাত পত্রিকায় খবর ছাপানো হয়। এর ভিত্তিতে দুদকে উড়োচিঠিতে অসত্য অভিযোগ পাঠানো হয়। তারপর আমাকে বরখাস্ত করা হয়।’ এদিকে ইফার পরিচালনা পর্ষদের প্রধান সিরাজ উদ্দীন আহমেদ ৩ জুন এক আদেশে পরিচালক মহিউদ্দিনের বরখাস্ত আদেশকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তাঁকে দায়িত্ব পালন করার আদেশ দেন। এরপর ৯ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, মহাপরিচালকের করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি বেআইনি, ক্ষমতাবহির্ভূত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অকার্যকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।