অন্তহীন ভোগান্তি সীমাহীন খরচ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

ঢাকামুখো মানুষের ঢল

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের পর ফিরতি যাত্রার দ্বিতীয় দিনেও ঢাকামুখো মানুষের ঢল নেমেছে। সোমবার সকাল থেকেই ঘাট এলাকায় দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। পরিবহন সংকট আর বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি সয়েই কর্মস্থলে ফিরছেন সবাই। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঘাট এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
ভোর না হতেই হাজার হাজার মানুষ আসতে থাকেন ঘাট এলাকায়। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার কিংবা হেঁটে যে যেভাবে পারছেন নদী পারাপারের জন্য ভিড় করছেন। ফেরি পর্যাপ্ত থাকলেও ছোটবড় যানবাহন আর যাত্রীচাপে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রিয়জনের টানে ঘরে ফেরা মানুষকে জীবিকার তাগিদে ফিরতে হচ্ছে নগরীতে।
কয়েকজন জানান, ফেরিতে অনেক ভিড়। সরকার যে জন্য গাড়ি খুলে দিচ্ছে না। সেটাতো এখানে হচ্ছে না। আরও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ঘাট এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি রয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
এদিকে, লকডাউন উপেক্ষা করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে সোমবার সকাল থেকেই ট্রলার, স্পিডবোট ও ফেরিতে মেঘনা নদী পাড়ি দিতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে। প্রতিটি ট্রলার ও ফেরিতেই ছিল ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী।
অন্যদিকে, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার না মেনেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় চলাচল করছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস। প্রতিটি বাসেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পথে পথে নানা ভোগান্তি, গাদাগাদি করে ফেরি পারাপার আর করোনার ঝুঁকি নিয়েই ঈদের ছুটির পর কর্মস্থলে ফেরার এই লড়াই।
মহাসড়কে অন্তহীন ভোগান্তি, সীমাহীন খরচ : ঈদ উদযাপন শেষে গ্রাম থেকে মানুষ কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করেছে। রোববার বিকেল থেকেই গাজীপুরে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে এসব মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে দূরপ্লার বাসের সঙ্কটে লোকাল বাস-মিনিবাস, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে চলতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সোমবার ভোর পাঁচটায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জামালপুর থেকে রওনা হয়েছেন গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার স্টার লাইট গার্মেন্টস্ কারখানার শ্রমিক মো. সাইফুল ইসলাম।স কাল সাড়ে ৮টায় তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় পৌঁছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ট্রাক-পিকআপে করে ঈদে বাড়ি যেতে খুব কষ্ট হয়েছে। স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে সেই কষ্ট ভুলে গেলেও ঈদ শেষে আবার কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে গাড়ি সঙ্কটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। সঙ্গে থাকা লাগেজ ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একাধিকবার গাড়ি পাল্টাতে গিয়ে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েন বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা ফেরা মশিউর জারিফ নামে একজন জানান, তারে বেশ কয়েকবার লোকাল যানবাহন বদল করে করে ফিরতে হয়েছে। একবার সিএনজি, একবার বাস, একবার অটোরিকশা, কখনো মোটরসাইকেলে করে ফিরতে হয়েছে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায়। তিনি জানান, যেখানে স্বাভাবিকভাবে দূরপাল্লার বাস খোলা থাকলে খরচ হয় আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা, সেখানে তার সাড়ে ৫ থেকে ৬শ’ টাকা খরচ হয়েছে।
একইদিন ভোরে শেরপুর থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, অনেক সময় অপেক্ষা করেও দূরপাল্লার কোনো বাস পাননি। তাই ভেঙে ভেঙে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লোকাল বাস পাল্টে পাল্টে তিনি ময়মনসিংহে আসেন। পরে সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় এবং সেখান থেকে ময়মনসিংহের সীমান্ত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় আসেন। সেখান থেকে লোকাল বাসযোগে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকার একটি মোবাইল কোম্পানিতে সেলস্ম্যান হিসেবে চাকরি করেন মামুন হাসান। তিনি বলেন, নেত্রকোনা থেকে বাসে দেড়শ টাকা ভাড়ায় ময়মনসিংহ এসেছেন। তারপর, তিনশ’ টাকা ভাড়ায় ঢাকাগামী শ্যামলী বাংলা পরিবহনে মাওনা চৌরাস্তায় নেমেছেন। নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহের অন্যান্য সময়ে ৫৫ টাকা ও ময়মনসিংহ থেকে মাওনা চৌরাস্তার ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়ার চাইতে ভোগান্তি ছাড়াই নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোই বড় কথা।
অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা গেছে। আন্তঃজেলা ব্যতীত দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি মানছেন না কিছু চালক ও পরিবহন মালিক। সোমবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও এসব পয়েন্টে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া মহাসড়কে পরিবহনের তেমন চাপ নেই। অন্যান্য দিনের মতোই পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে চালকদের দাবি, দীর্ঘ দিন বেকার থাকায় বাধ্য হয়ে বাস নিয়ে মহাসড়কে বের হয়েছেন তারা।
জানা গেছে, দিনে মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকলেও রাতে সংখ্যা বেশি থাকে। এ ছাড়া পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন পরিবহনেই কর্মস্থলে ফিরছেন বেশি মানুষ। এ ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি বলে জানান তারা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসচালকরা জানান, সরকারিভাবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আমাদের সংসার খরচ বন্ধ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাস চালাচ্ছি। ঢাকা যেতে অনেক জায়গায় বাঁধার সম্মুখীন হলেও আবারো ঢাকামুখী হচ্ছেন তারা।
মির্জাপুর ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কে আমরা কাজ শুরু করেছি। জেলার বাস চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস খুব একটা চলছে না। রাস্তায় যানবাহন কিছুটা বাড়ছে।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট : মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুরের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এই নৌরুটে ১৮টি ফেরিতে করে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের সঙ্গে পার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের চাপ নেই বললেই চলে। এতে করে শিমুলিয়া ঘাটে কোনও যান ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকছে না। সোমবার সকালে ফেরিঘাটের এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, সকাল থেকে এই নৌরুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় কোনও যান বা যাত্রী নেই। এই ঘাট ফাঁকা। তবে বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের চাপ রয়েছে।
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, নৌরুটে কোনও লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলছে না। সকাল থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় কোনও যান ফেরির অপেক্ষায় নেই।


বিজ্ঞাপন