জাপানের ওসাকা শহরের রূপ পাবে ঢাকা

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

রাজধানীজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে যাবে মেট্রোরেল

 

বিশেষ প্রতিবেদক : পাঁচটি প্যাকেজে রাজধানীজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে যাবে মেট্রোরেল। পুরো ঢাকাকে মেট্রোরেলে বিস্তৃত করতে মাটির তলদেশ ও ভূমির উপরে এলিভেটেডের মাধ্যমে জাপানের ওসাকা শহরের রূপ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে ইতোমধ্যেই মেট্রোরেলের তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে ৭ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে খসড়া এডিপি তৈরি করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন- ১ এবং এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর ১ম অংশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই এ রুটে ট্রায়ালের জন্য মেট্রোরেল চালানো হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলে চূড়ান্ত হবে নতুন বছরের এডিপি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকারভুক্ত মেগা প্রকল্পের তালিকাভুক্ত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাচ্ছে আগামী অর্থবছরে। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়েই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। তাছাড়া প্রাপ্ত বরাদ্দের কম-বেশি প্রয়োজন হলে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আগামী অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দকৃত মেট্রোরেলের প্রকল্পগুলো হলো : ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি-৬)- এই প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। ২০২৪ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৩.২৬ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৪.৭৯ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫৯.৭৮ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৫৪.৪০ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি-১)- ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনটি দুটি অংশে বিভক্ত। অংশ দুটি হলো : বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) এবং পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো) বিমানবন্দর রুটের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার এবং মোট পাতাল স্টেশন সংখ্যা ১২টি। এ রুটেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হবে। পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। এ রুটে সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি হবে। বর্তমানে এ লাইনটির বিস্তারিত নকশার কাজ চলমান রয়েছে। নকশা প্রণয়ন কাজের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের খসড়ায় দেখা গেছে, এ এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে এই প্রকল্পটি মোট বরাদ্দ পাচ্ছে ৮৭৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে প্রকল্পটির বরাদ্দ রয়েছে ৫৯১ কোটি টাকা।
ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি-৫)- ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে ২০ কিলোমিটার (পাতাল ১৩.৫০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৬.৫০) ও ১৪টি স্টেশন (পাতাল ৯টি এবং উড়াল ৫টি) বিশিষ্ট মেট্রোরেল নির্মাণের লক্ষে এই লাইনটির সমীক্ষা যাচাই শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সার্ভে ও বেসিক ডিজাইনের কাজ চলছে। বেসিক ডিজাইনের কাজের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ।
এডিপির খসড়া থেকে জানা গেছে, এমআরটি লাইন- ৫ বাস্তবায়নে মোট ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি ২০১৯ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পটিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে তাদের চাহিদা চাওয়া হয়েছিল। চাহিদা পাওয়ার পর আমরা কিছু কাটছাঁট করে এডিপির বরাদ্দ দিই। কিন্তু মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য যা লাগবে তাই দিতে হয়। কারণ এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্প। মেগা প্রকল্পে যদি আরও বরাদ্দের প্রয়োজন হয় তাহলে সংশোধিত এডিপিতে দেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন