ফেসবুক লাইভ অ্যাপে সুন্দরী তরুণীর ফাঁদ

অপরাধ এইমাত্র

স্ট্রিমকার অ্যাডমিনরা পাচার করছে শতকোটি টাকা


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সুন্দরী তরুণীদের ফেসবুক লাইভে এনে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তরুণ ও যুবকদের। তাদের সেই প্রতারণার ফাঁদে অনেকেই পা দিয়ে অনলাইনে লাখ লাখ টাকা মূল্যের কারেন্সি ক্রয় করছেন। আর সেই কারেন্সিগুলো লাইভকারী তরুণীদের উপহার দেওয়া হচ্ছে। এরপর স্ট্রিমকার অ্যাডমিনদের কাছ থেকে কারেন্সিগুলো কিনে তা চ্যাটকারীদের কাছে বিক্রয় করছে প্রতারকচক্র।
আবার লাইভের পর চ্যাটিংয়ের নামে প্রেমের ফাঁদে ফেলেও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা ও স্বর্ণলংকার। শুধু তাই নয়, সুন্দরী তরুনীদের সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে তাদের পরিবারের কাছ থেকেও মোটা অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। আবার অনেক সময় প্রেমের পর বিয়ের নামে দৈহিক সম্পর্ক করে তার ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। আর ওই সব ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়েও অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অভিযোগে মাঝে-মধ্যে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে আনার তরুণীদের মাধ্যমে আয়কৃত কারেন্সি হতে প্রতি মাসে শতকোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। স্ট্রিমকার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি অ্যাপস। এই অ্যাপস ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের জন্য আড্ডা দেওয়ার জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুন্দরী মেয়ে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়–য়া মেয়েদের সেলিব্রিটিরা হোস্ট এজেন্সি নামক একটি প্রতারকচক্রের মাধ্যমে প্রথমে এই অ্যাপের হোস্ট আইডি খোলা হয়। এরপর ওইসব তরুণীদের সঙ্গে যারা আড্ডা দিতে আসেন তাদের হোস্ট এজেন্সির কাছ থেকে বিন্স নামক এক ধরণের ডিজিটাল কারেন্সি বা মুদ্রা কিনে তা সুন্দরীদের গিফট করতে হয়। আর এই ডিজিটাল কারেন্সি -বিনস হোস্টদের কাছে গেলেই তা জেমস নামক ডিজিটাল কারেন্সিতে রূপান্তরিত করা হয়। আর এক লাখ জেমস’র মূল্য ৬০০ টাকা হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে স্ট্রিমকার ব্যবহার করা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়াকের্র মাধ্যমে এগুলো প্রতারকচক্র ব্যবহার করছে। আর এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য অপশনের মধ্যে জুয়াও রয়েছে।
সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে থাকার জন্য সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মাসে মোটা অংকের বেতন দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই মেয়েরা প্রতারকচক্রের কথা মত দীর্ঘসময় লাইভ চ্যাটিং করতে থাকে। আর এই চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে যারা তাদের খপ্পরে পড়ছেন, তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার উপহার-সামগ্রীও গ্রহণ করছেন। তাছাড়া স্ট্রিমকার অ্যাডমিন প্যানেল থেকে এই মুদ্রা ক্রয় করে তা ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে হোস্ট এজেন্সি। তাদের এই লোভনীয় ফাঁদে লাইভ স্ট্রিমিং এনে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণাও করা হয়।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশে স্ট্রিমিং ব্যবহারের মাধ্য প্রতারচক্র এ ধরণের ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট রয়েছে। যারা প্রতি মাসে প্রায়শ’ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে আসছে।
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, দেশের কিছু সুন্দরী তরুণী নিজের অবস্থান থেকে নির্দিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে তারা মাসিক বেতনে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। এরপর তাদেরকে দিয়ে প্রতারণার কাজ করানো হচ্ছে। আর এই প্রতারণার মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তারা পেয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। সম্প্রতি ডিজিটাল প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ৪জনকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি আয় ও বিদেশে পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।
অপরদিকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অ্যাপস এর মাধ্য সুন্দরী তরুনীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। আর এ ধরণের অভিযোগে ফয়সাল গনি (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
জানা গেছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনি পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত ফয়সালের বাড়ী ঝিনাইদহ হড়িনাকুন্ড থানার আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামে। তার বাবা ঢাকায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়া-লেখা করাকালীন মাদারীপুরে বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। অনার্স শেষে বাবা-মায়ের সাথে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন। এরপর টিউশনি করে যা পায় তাতে তার পকেট খরচ হয় না। বাড়তি আয়ের আশায় হাত বাড়ায় প্রেমিকার দিকে। প্রেমিকার চাকরির কথা বলে হাতিয়ে নেয় অনেক টাকা, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। প্রেমিকা যখন তার মনের খবর বুঝতে পারে তখন তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। সে নিজেকে আড়াল করার জন্য প্রেমিকার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দিশেহারা মেয়েটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তেজগাঁও থানায় মামলা রুজু হয়। তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন।
জানা গেছে, জামিনে এসে প্রতারণার শুরু করে। মিরপুরের শাহ আলীবাগে ব্যাচেলর এক মেসে ওঠেন। পরে টাঙ্গাইলের এক স্কুল পড়ুয়া কিশোরী অতিমারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পিতা-মাতার সাথে ঢাকায় থাকার সুবাদে মিরপুরের এক কোচিংয়ে ভর্তি হন। কোচিংয়ে আসা-যাওয়ার পথে কিশোরীর সাথে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তার পরিবার প্রস্তাবে রাজি হননি। পরে গোপনে কিশোরীর সাথে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে এনএসআইতে চাকরির নামে কৌশলে ২লাখ ৮০ হাজার টাকা ও দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণ হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় কিশোরীর পিতা গত ৪ মে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোস্তাজিরুর রহমান জানিয়েছেন, উক্ত মামলা তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত করে তেজগাঁও এলাকায় অভিযান করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।