ডেস্ক রিপোর্ট : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ নীতি’ অনুসরণের ফলে দেশটির রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে সহায়তা প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা যায়। এই প্রথম মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রশ্নে জাতিসংঘ কঠিন কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা দিল। জাতিসংঘের এক চিঠির বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, সংস্থাটির আবাসনবিষয়ক সমন্বয়ক নাট অসবি মিয়ানমার সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দেশটিতে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অধিবাসী (আইডিপি) ক্যাম্পগুলোতে প্রতিশ্রুত পরিবর্তন নিশ্চিত না করা পর্যন্ত জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো সেখানে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা ছাড়াও সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দেবে। সাত বছর আগে সহিংসতার কারণে রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বানানো ক্যাম্পগুলোতে অব্যাহতভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। গত ৬ জুন পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, এসব ক্যাম্পে আশ্রিতদের বিচরণের স্বাধীনতাসহ মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট অগ্রগতি হলেই কেবল আগামীতে জাতিসংঘের সহায়তা দেওয়া হবে। বর্তমানে দেশটির গৃহীত নীতির ফলে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করার ঝুঁকি বজায় রাখছে বলে চিঠিতে বলা হয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ও কামান মুসলিম থাকা ওইসব ক্যাম্প বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০১২ সালের সহিংসতায় বাস্তুহারা মুসলিমদের বিচরণের স্বাধীনতা হরণ করে জোরপূর্বক ওই সব ক্যাম্পে দারিদ্র্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হয়। সে সময় জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে পরিচালিত এক কমিশনের সুপারিশে মিয়ানমার পর্যায়ক্রমে ওই সব বাস্তুহারার জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাসহ তাদের নিজ গ্রাম বা তার কাছাকাছি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি এবং এখানকার বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকার, জীবিকাব্যবস্থা, বিচরণের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন ম্যায়েট আয়ে বরাবর জাতিসংঘের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পুরোনো ও নতুন করে নির্মিত ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা আগের মতোই অমর্যাদার শিকার হচ্ছে। তাদের জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। মিয়ানমারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্যাম্পগুলো বা তার আশপাশেই ক্যাম্পবাসীর জন্য স্থায়ী বসতি নির্মাণ করছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে এটাই স্পষ্ট যে, সরকারের জাতিগত বিদ্বেষ নীতি স্থায়ী হবে। এভাবে সরকার জাতিসংঘের অব্যাহত সহায়তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বহু বছর ধরে জাতিগত সহিংসতার শিকার। ২০১২ সালের পর ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পরে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে মিয়ানমারে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে।