নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে এমন প্রতারণা চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের ফটোকপির দোকানে ফেলে দেয়া কাগজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষকে প্রতারিত করে আসছিল তারা।
রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পাশে সারি সারি ফটোকপির দোকান। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং পাসপোর্ট আবেদনের পূরণ করা ফরম ফটোকপি করছেন মানুষ। কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত কপি ফেলেও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
পুলিশের কাছে খবর ছিল এই ফেলে দেয়া কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। সেই অনুযায়ী আগারগাঁও এলাকায় অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। কিছু সময় পরেই নজরে আসে কাগজ কুড়াচ্ছেন একজন। একই কাজ করতে দেখা যায় আরও একজনকে। তাদের ঘিরে সন্দেহ বাড়ে, বাড়ে নজরদারিও। এক পর্যায়ে দুজন এক হয়ে কুড়ানো কাগজ মেলাতে শুরু করলে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয় তাদের।
আটকের পর গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, তারা এসবির পরিচয় দিচ্ছে। পুলিশের পরিচয় দিয়ে তারা এই প্রতারণা করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে এসব কাগজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষকে ফোন দেয় তারা। এসবি পরিচয়ে ভেরিফিকেশনের নাম করে দাবি করে টাকা। না দিলে নেতিবাচক প্রতিবেদন দাখিলের ভয় দেখায়।
আটককৃতরা বলেন, ফটোকপির দোকানে ফেলে দেয়া কপিগুলো থেকে নম্বর নিয়ে ফোন করি। কল দিয়ে এসবির কথা বললেই টাকা দেয়।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন দুজন ভুক্তভোগী। তারা জানান, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার দুদিনের মাথায় এসবি পরিচয়ে ফোন আসে তাদের কাছে। ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা চাওয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা শোধও করেন তারা। পরে আসল এসবি থেকে ফোন পেলে ভুল ভাঙে।
এক ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে কল দিয়ে পাসপোর্টের কথা জানানো হলো। এরপর আমি যেতে চাইলেও বলেন, আসার দরকার নেই। টাকা কিছু বিকাশ করে পাঠিয়ে দেন। এরপর আমি কিছু টাকা বিকাশ করে দিলাম।
অপর একজন বলেন, আমাকে কল দিয়ে একজন বললেন, আমি এসআই নিরব হাসান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ছুটির দিনে কি রিপোর্ট হয়? তখন তিনি বলেন, আমার কাছে ৩০ তারিখ কাগজ চলে এসেছে, ২ তারিখের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে ৩ তারিখে জমা দিতে হবে।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আটককৃতরা এক সময় পাসপোর্ট অফিসে দালাল হিসেবে কাজ করতো। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একজনের ১৫দিন এবং অপরজনের ১ মাসের জেল হয়েছিল। জেল থেকে বের হয়ে প্রতারণার কাজে নেমেছে।
গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এই কারণে সত্যিকারের পুলিশ যখন পাসপোর্ট প্রত্যাশীকে ফোন করেন তখন তারা মনে করেন এবার ভুয়া পুলিশ কল দিয়েছে এবং তারা তখন পুলিশকে সহযোগিতা করেন না। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
পাসপোর্ট ভেরিকেশনের জন্য কোনো টাকা লেনদেনের বিধান নেই জানিয়ে পুলিশে বলছে, কেউ টাকা চাইলে স্থানীয় থানায় জানাতে।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2019/06/maxresdefault-2.jpg)