মহসীন আহমেদ স্বপন : একটা প্রবাদ আছে না? মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। সেই প্রবাদটা এখন বেশ অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। দেশে এখন এই মেঘ তো এই বৃষ্টি। হঠাৎ যেমন কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ, নামছে মুষলধারে বৃষ্টি। তার একটু পরেই হয়ত আকাশ আলো করে উঠছে সূর্য, তার তাপ দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশ। এমন আবহাওয়ায় দিনের কার্যসূচি ঠিক করা মুশকিল। কখন যে রোদ পুড়িয়ে দেবে আর কখন যে বৃষ্টি ভিজিয়ে দেবে তা ঠাহর করা যায় না।
রাজধানীর হাইকোর্টের অদূরে সচিবালয়গামী রাস্তায় প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন ট্রাফিক কনস্টেবল খলিল মিয়া। লালবাতি জ্বলে উঠতেই তিনি সিগন্যাল বাতি সংলগ্ন ফুটপাতের একটি গাছের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়ালেন। দর দর করে ঘামছেন সে। ঘামে ভিজে পরিধেয় ইউনিফর্মের জায়গা জায়গায় লবণের ছোপ ছোপ সাদা দাগ।
খলিল মিয়া বলেন, কী যে ভ্যাপসা গরম পড়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। নীচে রাস্তা থেকে গরম ভাপ উঠছে আর উপর থেকে আগুনের মতো তাপ বের হচ্ছে। ছাতা মাথায় দিলে গরম আরও বেশি লাগে। তিনি বলেন, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটির সময় কতবার যে ঘামে ইউনিফর্ম ভিজে আর তাপে শুকায় তা আর কী বলবো। একদিন কাপড় না ওয়াশ করলে পরিধান করা যায় না। কবে যে গরম কমবে বলতে পারেন?
ট্রাফিক কনস্টেবল খলিল মিয়ার মতো রাজধানীর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছেন। সকলেই বলছেন, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। অথচ অত্যাধিক গরম পড়ছে। সকলের প্রশ্ন এত গরম কমবে কবে?
রোববার সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যায়, ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজধানীর সকলেই গরমে ছটফট করছেন। বাইরে রোদে খানিকটা সময় ঘুরেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। জীবিকার প্রয়োজনে শ্রমজীবী মানুষরা ঘামে ভিজেই কাজ করছেন।
এদিকে দেশের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী বৃহস্পতিবারের (২৭ জুন) আগে গরম কমবে না। অধিদফতরের আবহাওয়া বিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, ২৬ জুন (বুধবার) পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না। ২৭ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এ পর্যন্ত গরম সহ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
গত কয়েকদিনের গরম অনুভূত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলছে। সে তুলনায় বৃষ্টিপাত খুবই কম। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রোববার দুপুরের তাপমাত্রা (৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস) অনুপাতে যতটুকু আদ্রতা থাকার কথা তার চাইতে বেশি থাকায় এমন ভ্যাপসা গরম লাগছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প ও তাপমাত্রা বেশি থাকা, বৃষ্টি কমে যাওয়া ও বাতাসের প্রেসার কমে যাওয়ায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।
রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা দুর্বল হয়ে আসছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ফরিদপুরে ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬ ও সর্বনি¤œ ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। রোববার দুপুর ১টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
গরমে তপ্ত নগরজীবনে বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়েই আসে, তবে সেই বৃষ্টি যখন অতিবৃষ্টিতে রূপ নেয় আর তলিয়ে যায় বিভিন্ন অলিগলি রাজপথ, তখনই সেটা শহরের কান্না হয়ে যায়।