ভূমধ্যসাগরে ৩৭ জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে ৩৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষকে মৌখিকভাবে এ নির্দেশ দিয়ে রিট আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহ স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রেখেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। রিট আবেদনের পক্ষ ছিলেন আইনজীবী এমদাদুল হক সুমন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, জড়িতদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ কাজের সঙ্গে জড়িত সিলেট ও নোয়াখালীর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে কিনা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের বিষয়টিও জানাতে হবে। এর আগে গত ১৬ জুন ওই ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং ওই ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন। রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সিলেট ও নোয়াখালীর এসপিকে বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে যে ৩৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পাচার সংক্রান্ত ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। এছাড়া এ রিট আবেদনে প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। ১৭ জুন আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, গত ৯ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনে প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সিসহ, ১৫ পাচার চক্র ও নোয়াখালীর তিনভাই চক্র অবৈধভাবে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান এ আইনজীবী। কিন্তু নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়। গণমাধ্যমের খবর অনুসারে গত ৯ মে গভীর রাতে লিবিয়া উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় চড়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। গভীর সাগরে বড় নৌকাটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি নৌকায় তাদের তোলা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিমকে উদ্বৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাবারের তৈরি নৌকাটি ১০মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে ১১ মে সকালে জারজিজ শহরের তীরে নিয়ে আসে। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানান, সাগরের ঠা-া পানিতে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিলেন। উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি। বাংলাদেশি বেঁচে ফেরা অভিবাসীদের ভাষ্যমতে, নৌকাটিতে ৫১ জন বাংলাদেশি ছাড়াও তিনজন মিশরীয় এবং মরক্কো, চাঁদ এবং আফ্রিকার অন্যান্য কয়েকটি দেশের নাগরিক ছিলেন।