ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের বিক্ষোভ নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় ঢাকা রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সদস্যপদের জন্য বয়সসীমা শিথিল এবং ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধরা। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টার এই বিক্ষোভের সময় তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ভেতরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। গতকাল সোমবার সকালের পর থেকেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় ছোট ছোট মিছিল নিয়েও নেতাকর্মীদের আসতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। এর পরপরই গোল্ডেন প্লেট রেস্টুরেন্টের গলি ও মূল রাস্তায় পর পর দুটো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আরো চারটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। তবে একটি বিস্ফোরিত হয়নি। এ সময় আশপাশের লোকজন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। তবে কারা এসব ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটি জানা যায়নি। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি বিক্ষুব্ধরা। এ সময় ভেতর থেকে বের হওয়ার কয়েকজন কর্মীকে মারধরও করতে দেখা যায়। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আমিরুল ইসলাম খান আলিমসহ সাবেক ছাত্রনেতা ও কয়েকশ কর্মী অবস্থান করছেন। বেলা ১টার দিকে দিনের কর্মসূচি শেষ করে বিক্ষুব্ধদের পক্ষে ছাত্র দলের গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না মোল্লা বলেন, আমাদের দাবি, ২০০০ সালের বয়সসীমা উঠিয়ে দিতে হবে। যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাতিল করে পুনঃতফসিল করতে হবে। আগামীকালও (মঙ্গলবার) আমরা কর্মসূচির জন্য এখানে আসব। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে। আমরা ছাত্র দলকে ভালোবাসি, এই দলের জন্য আমরা রাজপথে জীবন-যৌবন সব দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতারা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতার সাথে আলাপ করে সুষ্ঠু সমাধান করবেন। এরপর সদ্য বহিষ্কৃত ছাত্রদলনেতা একতিয়ার কবির, এজমল হোসেন পাইলট, মামুন বিল্লাহ, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, দবির উদ্দিন তুষার, জহিরউদ্দিন তুহিন ও রাজীব আহমেদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরার দিকে চলে যায়। তখন পেছন দিকে হাতবোমার বিস্ফোরণ হলেও কেউ হতাহত হয়নি। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় কাকারাইলের স্কাউট ভবনের দিক থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাদের নেতৃত্বে একটি মিছিল নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে আসে। তারা ‘অবৈধ প্রেস রিলিজ মানি না, মানব না’. ‘সিন্ডিকেটের দালালদের আস্তানা ভেঙে দাও,, গুড়িয়ে দাও’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, দালালেরা গেল কই’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষুব্ধরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের পক্ষেও শ্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে গত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত সাংবাদিকদের বলেন, বয়সসীমা উঠিয়ে দিয়ে পুনঃতফসিল করে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে হবে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্য্যাহার করতে হবে। গত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ বিপুল বলেন, পছন্দের কাউকে নির্বাচিত করার জন্য হয়ত কথিত সিন্ডিকেট এই বয়সসীমার শর্তারোপ করেছে হয়েছে- এটা বাতিল করতে হবে। আমাদের ভাইদের যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের দীর্ঘ দিনের ২০/২২/২৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম রয়েছে। আমরা মনে করি, এটা অবিচার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। এজন্য আমরা এখানে অবস্থান কর্মসূচি করছি। ১৫ জুলাই ছাত্র দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন অনু্ষ্িঠত হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ হবে। তবে ভোটকেন্দ্রের স্থান এখনো ঠিক করা হয়নি। গত রোববার সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করে ছাত্রদল কাউন্সিল-২০১৯ এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। সে অনুযায়ী গতকাল সোমবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে।বহিষ্কৃতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন, ছাত্র দলের ভেঙে দেওয়া কমিটির সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, আবদুল মালেক ও সাবেক কমিটির সদস্য আজীম পাটোয়ারি। এই বহিষ্কৃত নেতারা শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবি বয়সসীমার শর্ত তুলে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। গত ৩ জুন বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২০০০ সালের পরের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়। বয়সসীমা উঠিয়ে দেওয়ার দাবিতে ১০ জুন থেকে বিক্ষোভ করে আসছে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের একাংশ। পরদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে তারা। গত শনিবার তাদের ১২ নেতাকে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্য্ক্রমের অভিযোগ বহিস্কারের পরদিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তফসিল ঘোষণা করে। ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আকরামুল হাসানকে নির্বাচিত করা হয়। রাজীব-আকরামের নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা পর দীর্ঘদিন পরে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিল।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *