রেলপথের স্লিপারে সাজানো মৃত্যুফাঁদ

অন্যান্য অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা বানিজ্য সারাদেশ সিলেট

মহসীন আহমেদ স্বপন : সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু নজরে আসছে না কর্তৃপক্ষের। এরই মধ্যে গত রোববারের রেল দুর্ঘটনায় আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে এই রেললাইন।
বিভিন্ন সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই রেল কর্তৃপক্ষের। দেশের নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার শীর্ষস্থানে রেলপথ থাকলেও আখাউড়া-সিলেট রেলপথের প্রতিটি স্লিপারে সাজানো রয়েছে মৃত্যুফাঁদ। লক্কড়-ঝক্কড় রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে স্লিপারে নেই নাট-বল্টু। এমনকি বাঁশ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে রেলসেতু।
রেশ কাটেনি কুলাউড়ার বরমচালের রেল দুর্ঘটনার। তবুও টনক নড়েনি রেল কর্তৃপক্ষের। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় স্লিপারের নাট বেধে রাখা হয়েছে সুতা দিয়ে। নড়বড়ে আছেন অনেক স্থান।
সাংবাদিকদের পেয়েই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্থানীয় কয়েজকন। সাংবাদিকদের নিয়ে স্টেশন এলাকায় ট্রেন লাইনে সংযোগস্থল দেখান। দুটি রেলের সংযোগস্থলে স্লিপারের সঙ্গে ৮টি ক্লিপ থাকার কথা থাকলেও কোথাও একটি আবার কোনো কোনো সংযোগস্থলে ক্লিপ নেই।
তাছাড়া রেলের সঙ্গে স্লিপারের ক্লিপ নেই। রেলের স্লিপারের মধ্যে পাথর নেই। ঘাসে আচ্ছাদিত পাথর। লাইনের এই অবস্থায় দুর্ঘটনা হবে নাতো কী হবে? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
স্থানীয় মাসুক মিয়া, জাকারিয়া আলম, সুলতান আহমদ চৌধুরী, সিপন আহমদ জানান, স্টেশনে ৩টি লাইন রয়েছে। ৩ নম্বর লাইনটি বন্ধ। দুর্ঘটনার পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১ নম্বর লাইন। শুধুমাত্র ২ নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এমতাবস্থায় বরমচাল স্টেশনে কোনো ট্রেন ক্রসিং করা মোটেও সম্ভব নয়। ফলে এই ট্রেনলাইনে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে বরমচাল স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনাকবলিত উপবন ট্রেনটিকে ২ নম্বর লাইনেই লাইন ক্লিয়ারেন্স দেয়া ছিল। কম্পিউটারেও কোনো সমস্যা উল্লেখ করে নির্দেশনা দেয়া ছিল না।
সরজমিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল স্টেশনের ১ কিলোমিটার দূরে আউট সিগনাল এলাকায় খালের উপর একটি ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্রিজের ৮টি স্লিপারে যেখানে ৬৪টি নাট থাকার কথা সেখানে এই ব্রিজে নাট আছে ৩৫টা। এর পাশেই দুটি পাতের সংযোগস্থলে একটিতে নেই নাট-বল্টু। অন্য দুটি যেন খুলে না যায় তাই আটকানো আছে দড়ি দিয়ে।
অপরদিকে এই ব্রিজের পাশে একটানা ৩০টি স্লিপারের কোনোটাতেই নাট-বল্টু নেই। প্রতিটি স্লিপারের দুইপাশে দুটি করে পেরেক মেরে রাখা হয়েছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই এলাকায়।
রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে পারাবত, জয়ন্তীকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস নামের ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন দুইবার করে ১২ বার আসা-যাওয়া করে। আর এই পথে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন অন্তত ২৫/৩০ হাজার যাত্রী।
স্থানীয় যুবক আবুল কালাম জানান, শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ২০টি ব্রিজ আছে যার অর্ধেকের বেশি সেতু বাঁশ দিয়ে মেরামত করা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রেলের বিভিন্ন পর্যায়ে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান জানান, কুলাউড়ার ঘটনায় ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *