নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রেস ক্লাবে মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে সবসময়ই। নিজেদের দাবি-দাওয়া গণমাধ্যমের মাধ্যমে সমাজের কাছে তুলে ধরতে মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে জায়গাটি। দেখা যায় কত মানুষ আসছেন যাচ্ছেন। কেউ মানববন্ধন করছেন আবার কেউবা বিক্ষোভে। অন্যদের মতো চাঁদের কণাও এখানে এসেছেন নিজের দাবি তুলে ধরতে। বেঁচে থাকার জন্য একটি মাত্র চাকরিই তার চাওয়া। তবে এখনো আশার ছিটেফোঁটাও পাননি হুইল চেয়ারে বসা এই মেয়েটি।
চাকরির কাগুজে যোগ্যতাও রয়েছে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণার। কিন্তু চাকরি মিলছে না। চাকরির বয়সও শেষ হবার পথে। অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি চেয়ে অনশন করছেন তিনি। কিন্তু হতাশার কথা হলো এখন পর্যন্ত আশ্বস্ত করার জন্য চাঁদের কণার সঙ্গে সরকারের কেউ সাক্ষাৎ করেনি।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তার ওপর ফুটপাতে হুইল চেয়ারে বসা চাঁদের কণা। নিজের লেখা কবিতা, বিভিন্ন কষ্টের অনুভূতি লেখা পাশে ঝুলিয়ে তিনদিন ধরে চাকরির আশায় অনশন করছেন ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স পাস করা এ জীবন সংগ্রামী ছাত্রী।
চাঁদের কণা বলছিলেন, আশা একটাই-মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন তার জন্য। তিনি সুদৃষ্টি দিলে তার কপাল খুলবেই। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে বাঁচতে যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি খুব বেশি প্রয়োজন।
চাঁদের কণার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ৯ মাস বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে পায়ের কর্মক্ষমতা হারান চাঁদের কণা। তবে ভেঙে পড়েননি। সামলে নিয়েছেন। লড়াই করেছেন দুই হাতের ওপর ভাগ্যের চাকা সচল রেখেছেন। দুই হাতেই ভর দিয়েই চলাচল করেছেন। ওই দুই হাতের লেখনীতেই ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন।
টিভি/রেডিওতে সংবাদপত্র পাঠ, টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা, নাটক লেখা, নাটকে অভিনয়, কম্পিউটারের সকল কাজ, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ছবি আঁকা, ভিডিও এডিটিংসহ হাতের কাজে নানান ধরনের পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।
শুক্রবার চাঁদের কণা বলেন, আমি হতাশ নই। আমাদের মমতাময়ী একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন। তিনি চাইলে কী না হয়। আমি সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত এসেছি। আমার রেজাল্টও ভালো। শুধু দরকার একটা চাকরি। এখন আমার জীবন আরও কঠিন হয়ে গেছে।
মা হাসনা হেনা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পেনশনের সামান্য টাকায় কোনো রকমে টিকে আছে চাঁদের পরিবার। মা যখন মারা যান তখন তিনি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে আর্থিক চাপে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েননি, একটি বেসরকারি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। পড়াশোনা শেষে সরকারি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই মিলছে না সে চাকরি।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী চাঁদের কণা বলেন, আমি সরকারি চাকরির খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু যোগ্যতা ও চেষ্টা সত্ত্বেও চাকরি মিলছে না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবি না। তবে একটু সহযোগিতা তো লাগেই।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমি এখানেই অনশন চালিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রীর শুধু দৃষ্টি চাই। তিনি যদি বলেন, চাঁদের কণা তুমি চলে যাও তোমার ব্যবস্থা হবে, আমি চলে যাব। যদি তিনি বলেন, চাকরি দেয়া সম্ভব না তবুও চলে যাব। আর আসব না চাকরির দাবি নিয়ে।