বিশেষ প্রতিবেদক : শুধু রিফাত নয় বরগুনার ‘নয়ন বন্ড বাহিনী’ বিগত দিনে কুপিয়ে আহত করেছে একাধিক ব্যক্তিকে। বরগুনার সরকারি কলেজ ও তার আশপাশের এক একটি এলাকা ছিল এ বন্ড বাহিনীর এক একজন সক্রিয় সদস্যের দখলে। আর প্রতিটি এলাকায় চলতো তাদের তা-ব। এলাকাবাসী বলছে, বিভিন্ন সময় পুলিশের আশ্রয় নিয়েও রেহাই পায়নি তারা। কারণ বন্ড বাহিনীর পেছনে সমর্থন ছিল জেলার শীর্ষ এক রাজনৈতিক নেতার।
সম্প্রতি স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। বরগুনা সরকারি কলেজের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন বাড়িটি তার। কলেজ থেকে বাড়ির সীমানার মধ্যে তার ঝুপড়ি আস্তানায় যাওয়ার জন্য প্রাচীরের নিচ থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে নিয়েছে সে। আর সেখানেই মাদক সেবন ও নানা অনৈতিক কাজ করতো নয়ন ও তার বন্ড বাহিনী। শুধু সীমানা প্রাচীরের বাইরে নয়, নয়ন বন্ড তার তা-ব চালাত কলেজ ক্যাম্পাসে ও ছাত্র হোস্টেলেও। শিক্ষার্থীদের মারধর করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ।
বরগুনা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষ নিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
হত্যা মামলায় নয়নের পরের অবস্থান রিফাত ও রিশান ফরাজীর। সম্পর্কে আপন দুই ভাই এরা, আর ঘাতক নয়নের ডান হাত। ধানসিঁড়ি নামের এ এলাকাটি ছিল তাদের দখলে। এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে নানা কারণে লাঞ্ছিত ও কুপিয়ে আহত করেছে তারা।
শুধু রিফাতের বাড়িতে নয় এখনও কান্নায় ভেঙে পড়েন নয়ন ও রিশানের দায়ের কোপে রক্ত ঝরা পরিবারগুলোর সদস্যরা। তবে তাদের দাবি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় মামলা করেও কিছুই করতে পারেননি নয়ন বন্ড বাহিনীর।
রিফাত হত্যা মামলার আরেক আসামি মুসা। কেজি স্কুল এলাকাটি থাকতো তার দখলে। বছর তিনেক আগে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে চুরির অভিযোগে মুসার মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
হত্যা মামলায় নয়ন বন্ড বাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে এমন নানা অভিযোগ। আর নয়ন বন্ড বাহিনীকে আশ্রয়দাতা হিসেবে নাম উঠে আসায় তড়িঘড়ি করে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন দেলোয়ার হোসেন।
বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওদের গ্রেফতারের ব্যাপারে আমি শতভাবে পজিটিভ। আমি নিজেও আমার অনেক কর্মীকে বলেছি, দেখ ওদের খোঁজ কোথাও পাওয়া যায় কিনা।
তবে পুলিশের দাবি, নয়ন বন্ড বাহিনীর প্রতিটি অভিযোগেরই ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গত বুধবার স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার পর বন্ড বাহিনীর ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসতে থাকে তাদের নানা অপকর্মের তথ্য।