নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারের সফলতা সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য দানকালে এ কথা বলেন তিনি। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর দেয়া সুপারিশ কাজে দেবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রস্তাবনার কথাও বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমার সুপারিশ থাকবে ব্যাংকঋণের সুদ যেন সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখা হয়। কারণ এটি করা গেলে দেশের শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সক্ষম করে গড়ে তোলা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেরা যেমন দুর্নীতি করে তেমনি দুর্নীতিটাকে ব্যধির মতো সমাজে ছড়িয়ে দেয়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। প্রবাসীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থের ওপর আগামী অর্থবছর হতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে রেমিট্যান্স প্রদানে বর্ধিত ব্যয় লাগব হবে। এতে প্রবাসীরা বৈধপথে অর্থ প্রেরণে উৎসাহী হবেন। প্রবাসীদের বীমা প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এছাড়া
পুঁজিবাজারের স্টক লভ্যাংশ এবং রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত করারোপসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেটে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তা পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাজেট পাসের আগে রাজস্ব অংশের আলোচিত-সমালোচিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী তা সংশোধন করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পরে অর্থমন্ত্রী তা সংশোধন করে নিলে অর্থ বিল সংসদে পাস হয়।
‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। ল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুন্দ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এরূপ মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে। তাই নতুন প্রস্তাবে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেয়ার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রস্তাব করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরো প্রস্তাব করেছিলাম যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা কেউ কেউ আপক্তি করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে এই ধারাটির আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে করপরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতি বছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো আমরা বিবেচনা করব।
ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বেশকিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছে। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে, আইনে সে বিধান আনার প্রস্তাব করছি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সুতা শিল্পের ওপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করের প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণশিল্পের প্রণোদনা প্রদান ও বন্ড ব্যবস্থারের ক্ষেত্রে অপব্যবহার রোধকল্পে দেশে উৎপন্ন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনঃর্নিধারণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।