নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরের প্রথম বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আহম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। রোববার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে আগামি অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়। সোমবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে তা পাস হয়। প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান। এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি। নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে: এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মত। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশ করার পর সেই বাজেটের ওপর ২৫৫ জন সংসদ সদস্য মোট ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আলোচনা করেছেন। যা গত শনিবার শেষ হয়। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ১৪ জন সংসদ সদস্য ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট আলোচনা করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ: বাজেটে অর্থ বিভাগের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে, ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ৩২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৩ হাজার ৫২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং জাতীয় সংসদ খাতে ৩২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৪১ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৪১ কোটি, সরকারি কর্মকমিশন খাতে ১০২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অর্থ বিভাগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খাতে ২৩৮ কোটি ২২ লাখ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৩ হাজার ৪১ কোটি ৫৬ লাখ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ২৩১ কোটি লাখ টাকা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে ১৪৯ কোটি ১০ লাখ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩৭৫ কোটি ৩৪ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৬৩২ কোটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫৩ লাখ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ৩৮ কোটি ৩২ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৬৫২ কোটি, জননিরাপত্তা বিভাগে ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৪১ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি ৯০ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি ৩০ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৩৯ লাখ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৮১ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৩১৩ কোটি ৪৮ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৪ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৯৮৯ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ১২ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ৯১ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৮০০ কোটি ১৬ লাখ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭৯ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩১ লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি ৪৫ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১৫২ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭১ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি ৮ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৮৩২ কোটি ৭৭ লাখ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪২৬ কোটি ৩৪ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩২ হাজার, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি ৬৯ লাখ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৮ লাখ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৫৯০ কোটি ৯৪ লাখ, দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৪০ কোটি ১৭ লাখ, সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ৪৫৩ কোটি ৬০ লাখ, সুরক্ষা সেবা খাতে ৩ হাজার ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাস: আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এর মধ্যে, সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমান চার লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব: আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপির সদ সদস্যরা ৪৮৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যেযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দাবী ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো ও কৃষি ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব অংশ নিয়ে এ দাবি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। সংসদের বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, দেড়লাখ কৃষকের ঘাড়ে সার্টিফিকেট মামলা। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না, গ্রেফতার হয় না। অথচ গরিব কৃষক গ্রেফতার হয়। আমি প্রস্তাব করছি। কৃষি ঋণ আদায় এ মুহুর্তে স্থগিত রাখতে হবে। ঋণের সুদ মওকুফের ঘোষণা দিতে হবে। কৃষক ধানের দাম পেলে এরপর ঋণ পরিশোধ করবে। গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, কৃষিতে গত কয়েক বছর ধরে নীরব বিপ্লব হয়েছে। এর জন্য কৃষকরা পরিশ্রম করছে। সেই কৃষক এখন ধানের দাম পাচ্ছে না। কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত ভর্তুকি দাবি করছি। বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, কৃষিখাতে প্রতি বছর ভর্তুকি কমছে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মতো কোনো পদক্ষেপের কথা বাজেটে নেই। কৃষিখাতে ভর্তুতি কমিয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের পর কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের রফতানি আয় অনেক বেশি। এটা মূলত পোশাকখাত ভিত্তিক। আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে পাড়লে রফতানি আয় বাড়াতে পারবো। বিএনপি সরকারের আমলে সারের দাবিতে আন্দোলন করায় ১৮ জন ও বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করায় কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমাদের সরকারের সময় কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে ভর্তুকি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন বিনিয়োগ। ধানসহ ফসলের দাম কম এটা সাময়িক। যে যে কারণে দাম কমছে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।