চট্টগ্রামে যুবলীগ কর্মীকে নির্যাতনে আটক ৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এক যুবলীগ কর্মীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। যুবলীগ কর্মীকে নির্মমভাবে নির্যাতনে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের আটক করে নগরীর আকবরশাহ থানার পুলিশ। এর আগে যুবলীগ কর্মীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
পরে পুলিশ এ ঘটনার সাথে অপরাধীদের ধরতে অভিযানে নামে। আহত যুবলীগ কর্মীর নাম মো: মহসীন(২৬)। গত রোববার নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনী এলাকায় তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় আটককৃত পাঁচজন হলেন, মো. মাসুদ (১৮), মো. মিরাজ (১৭), মো. সাজু (২৪), মো. বেলাল (২০) ও মো. তারেক (১৮)। আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বকলোনী এন ব্লকে মহসিন নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নজরে আসার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আটক করে।
লাঠি-সোটা নিয়ে এগিয়ে আসা হামলাকারীদের দেখে প্রথমে পিছিয়ে গিয়ে পালানোর চেষ্টা করে যুবকটি। অনেকটা গ্রামের ঝোপঝাঁড়ে মানুষের লাঠির আঘাত থেকে সাপ যেভাবে বাঁচার চেষ্টা করে, তেমনই। যুবকটি দৌড়ে যাওয়ার সময় একটি দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। তখন হামলাকারীরা আসে, একজন তার এক পা ধরে রাখে। মাটিতে শোয়া যুবকটিকে তখন আরও ৫ জন লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। যেন লোকালয়ে ঢুকে পড়া কোন সাপকে পেটাচ্ছে! মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে যুবকটিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা মাথা উঁচু করে চলে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার (৩০ জুন) বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি এলাকায়। যুবকটিকে পেটানোর এক মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেই ফুটেজ দেখে হামলাকারী একজন এবং সন্দেহভাজন চারজনসহ মোট ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, হামলার ভিডিও ফুটেজ আমরা পেয়েছি। হামলাকারী মোট ৮ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। এদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। একজন আক্রান্ত যুবকটির পা ধরে রেখেছিল। বাকি পাঁচজন ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পের মতো লাঠি দিয়েস তাকে পেটাচ্ছিল। ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হওয়া একজন হামলাকারীকে আমরা রাতে গ্রেফতার করেছি।
পুলিশ জানায়, আক্রান্ত যুবকটির নাম মো. মহসিন (২৬)। মারামারির মামলায় প্রায় একমাস জেল খেটে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মহসিন জেল থেকে বের হন। মহসিনের বাসা বিশ্ব কলোনির এন-ব্লকে। বাসার কাছেই সে হামলার শিকার হয়। গুরুতর আহত মহসিনকে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, পদ-পদবি না থাকলেও মহসিন নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচির বলয়ে থাকা মহসিনের বিরুদ্ধে মারামারি-হামলার একাধিক অভিযোগ আছে। হামলার পর কচি’র অনুসারীরা অভিযোগ করেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসীমের অনুসারীরা এই হামলা করেছে।
এদিকে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে আটক করা হয়েছে মো. সাজু (২৪) নামে এক যুবককে। তাকে লাঠি হাতে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ওসি। সাজু’র বাড়ি দিনাজপুর জেলায়, থাকে চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার নন্দন গেইট এলাকায়।
ওসি আরও জানান, হামলাকারীদের মধ্যে জুয়েল, তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, ফারহান ও খোকন নামে ছয়জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জুয়েল আক্রান্ত মহসিনের পা ধরে রাখে। তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, সাজু ও ফারহান তাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। আর খোকন তাদের সঙ্গে ছিল।
এছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা হলো- মাসুদ (১৮), মিরাজ (১৭), বেলাল (২০) ও তারেক (১৮)।
ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, কি কারণে হামলার শিকার হয়েছে সেটা আমরা এখনো নিশ্চিত নই। যদিও কাউন্সিলরের অনুসারীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো মামলা হয়নি। গ্রেফতার হওয়া সাজুকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব। হামলাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রকাশ্যে সাপকে পেটানোর মতো করে যুবককে বেধড়ক মারধরের দৃশ্যটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। বরগুনায় দিনদুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার পর চট্টগ্রামের এই ঘটনাও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।