তদন্ত প্রতিবেদন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই কুলাউড়ার বরমচালে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। দুর্ঘটনায় যান্ত্রিক, সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম, প্রকৌশল বিভাগের সব মিলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে।
চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটির মতে রেলপথ নিয়মিত সংস্কার না করা, প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। স্থায়ী পরিদর্শক বা পূততকর্ম পরিদর্শক সার্বিক অবস্থার জন্য দায়ী।
তবে এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সই করেননি একজন। তিনজনের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন গত ১ জুলাই রেলওয়েল মহাপরিচালকের (ডিজি) দপ্তরে জমা দেয়া হয়। দুর্ঘটনার জন্য রেলপথের মৌলভীবাজার-কুলাউড়া অংশের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুলহাস ও গ্যাং ইনচার্জ সাইফুল আলমকে দায়ী করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
গত ২৩ জুন কুলাউড়া উপজেলার বরমচালে বড়ছড়া সেতুর উপর ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ৪ জন নিহত হন। আহত হন দুইশতাধিক যাত্রী। ঘটনার পরদিন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। ওই কমিটিকে ৩দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ হিসাবে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল গত ২৬ জুন। তবে নির্ধারিত সময়ের ৫দিন পর রেলভবনে জমা হয় প্রতিবেদন।
সূত্র জানায়, রেলপথ নিয়মিত সংস্কার না করা, প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। স্থায়ী পরিদর্শক বা পূতকর্ম পরিদর্শক সার্বিক অবস্থার জন্য দায়ী। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ৮ম, ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম কোচের চাকা লাইন থেকে পড়ে যায়। ১৭তম কোচটি রেল সেতুর নিচে পড়ে যায়।
দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেলপথের যন্ত্রাংশ ‘ক্রসিং বডির নোজ’ টিলা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়াও ক্রসিং বডির নোজের দুই পাশের হিল ব্লক লকিং নাট ঢিলা ছিল। সামনের দুটি হিল ব্লকের একটিও ছিল না। নোজের সামনের উইং রেলের সংযোগস্থলে ফিশপ্লেট খুলে পড়েছিল। কাঠের স্লিপারগুলো অত্যন্ত পুরনো ও কিছু স্লিপারের মাথা কেটে লাইন দেবে আছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আঞ্চলিক তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবদনে স্বাক্ষর করেননি।
এদিকে ওই রিপোর্টে রেলের পুরকৌশল শাখাকে দায়ী করে ৩ সদস্য সই করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। আর এ নিয়ে সৃষ্টি হয় রেলওয়ের পুরকৌশল ও যান্ত্রিক বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ। গত সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন দেয়া হয়। তবে প্রতিবেদন পেশকে কেন্দ্র করে রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও রেলপথের দুরবস্থার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সদস্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষরই করেননি।
তবে রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) আব্দুল জলিল তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করে সই করেননি। তার মতে উপবন ট্রেন বরমচালে রেল সেতুতেই দুর্ঘটনায় পড়েছে। ট্রেনচালক ট্রেন থামাতে চেয়েছিলেন দুর্ঘটনা এড়াতে পারেননি।
আঞ্চলিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শুধু প্রকৌশল বিভাগকে দোষারোপ করায় রেলের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কিছু কর্মকর্তা বলছেন, অতিরিক্ত গতি ও আলাদা বগির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন তদন্ত প্রতিবেদন জামা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন রেলওয়ের ডিজির কাছে জমা হয়েছে। জমা হওয়ার পর অফিসিয়ালি আমাদের কাছে আসবে।