রায়হান হোসেন,ঢাকা কলেজ: আজ শনিবার সকাল এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের না হওয়ায় ফের মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের ছাত্র আবু বকর বলেন, আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হলো আগামী ৮ তারিখ সোমবার ঢাকা কলেজের সামনে থেকে গনতন্ত্র ও মুক্তির তোরন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল,ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিকট স্বারকলিপি দেওয়া হবে। উল্লেখ্য পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ২০১৭সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়। কলেজ গুলো হলো ,ঢাকা কলেজ , ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ ,কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ,ও সরকারি বাংলা কলেজ।
অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে সাত কলেজে নেমে আসে কালো অধ্যায়। দীর্ঘ ৯ মাস ৭ কলেজের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর মানববন্ধন অনশন কর্মসূচি অবরোধ সর্বশেষ সিদ্দিকের চোখের বিনিময় ঢাবি ৭ কলেজের কার্যক্রম ধীরগতিতে শুরু করে।কিছুদিন চলার পরে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ৫ দফা দাবিতে টানা আন্দোলনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে ছাত্র আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু ঢাবির প্রশাসনিক একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে হতাশ।
অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীরা ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে এবং ফলাফল পাচ্ছে। অন্যদিকে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত শিক্ষা জীবন তাদেরকে পুনরায় রাজপথে নামতে বাধ্য করেছ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিনান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র জুয়েল রানা বলেন আমরা চাই আমাদের সেশনজট নিরসন করা হোক। এবং যথা সময়ে পরিক্ষা নেওয়া হোক।
ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের ছাত্রী বলেন পরিক্ষা নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় লাগে ফলাফল প্রকাশ করতে, এবং ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় গণহারে অকৃতকার্য, আমরা এই সমস্যার সমাধান চাই।
সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের ছাত্র আবু বকর বলেন অধিভুক্ত কলেজ বিষয়ে আর কোনো আশ্বাস নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে যৌক্তিক সমস্যার সমাধান চাই। তিনি আরো বলেন আমরা হতাশ তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিথ্যা আশ্বাস আর শুনতে চাই না।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো:
১. ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘায়ন পরিহার করে ৯০ দিনের মধ্যে সকল বিভাগের ত্রুটিমুক্ত ফলাফল একথা প্রকাশ করা ।
২. অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রী সকল বর্ষের ফলাফলে গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে ।
৩. সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন চাই ।
৪. সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করতে হবে।
৫.সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা।
পাঁচদফা দাবি পুরনের আশ্বাসের ৭০দিন পরের অবস্থা:
দফা-১: ৯০দিনে ফল প্রকাশের দাবি করা হলেও অনার্স ২০১৪-১৫ ও ডিগ্রি ২০১৪-১৫ পরীক্ষার ৮মাস পর আংশিক ফল প্রকাশ এবং অনার্স ২০১৭-১৮ও ডিগ্রি ২০১৩-১৪ এর পরীক্ষার সাত মাস পার হলেও ফল প্রকাশ হয়নি।
দফা-২: গনহারে অকৃতকার্যদের খাতা পুন:মূল্যায়ন হয়নি। দফা-৩: স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মানের লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দফা-৪: চলমান পরীক্ষা গুলোতে পূর্ব নোটিশ ব্যতিত নতুন প্যাটার্নে প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করা হয়েছে এবং ৪ ক্রেডিটের পরিক্ষায় সময় ৪ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৩:৩০মিঃ করা হয়েছে।
দফা-৫: প্রতিটি সেশনের সকল বর্ষের একাডেমীক ক্যালেন্ডার প্রকাশের দাবি করা হলেও শুধুমাত্র চলতি বর্ষের অসম্পূর্ণ একাডেমীক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেখানে উল্লেখিত সময়ে পরীক্ষা বা অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। এবং এখন পর্যন্ত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়নি।