হরতালের প্রভাব নেই রাজধানীসহ সারাদেশে

জাতীয় ঢাকা রাজধানী রাজনীতি সারাদেশ

হরতালে সমর্থন জানালেও মাঠে ছিল না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্যাসের দাম বাড়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধা বেলা হরতালের প্রভাব পরেনি রাজধানী সহ সারাদেশে। হরতালে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক ছিলো। রোববার সাপ্তাহিক কর্মদিবসের প্রথম দিনের সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলতে দেখা যায়। যা সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বাড়তে থাকে গণপরিবহনের সংখ্যা। গণপরিবহনগুলোতে ছিল কর্মমুখী মানুষের ভিড়।
সরেজমিনে রাজধানীর শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, সাইন্সল্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও কাকরাইল এলাকায় যানববাহনের উপস্থিতি রয়েছে স্বাভাবিক দিনের মতোই।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বানে আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি শেষ হয় গতকাল দুপুরে। গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ডাকা হরতালের সমাপ্তি ঘটে জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এর আগে দিনের শুরুতে শাহবাগ ও পল্টন এলাকায় বাম জোটের নেতা-কর্মীদের হরতালের সমর্থনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের অবস্থানের ফলে চারদিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ সড়কের মাঝখানে হরতালের সমর্থনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এর ফলে সাইন্সল্যাব থেকে শাহবাগগামী সড়কসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী সাধারণ মানুষ। অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতালে বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানালেও সড়কে তাদের কোন কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। দেখা মেলেনি দলটির কোন নেতা-কর্মীদের। গতকাল রোববার সকালে দলটির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, পুরানো পল্টন, মালিবাগ, কাকরাইল, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। সকাল ৭টার দিকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝোলানো দেখা যায়। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এরআগে গত শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বামজোটের ডাকা হরতালে গণমাধ্যমকে নিজেদের সমর্থনের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া হরতালকে সমর্থন জানায় ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের দল জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও অলি আহমেদের এলডিপি। এসব দলেরও হরতালের পক্ষে কোন মিছিল বা তাদের নেতাদের সড়কে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে গাবতলি লিংক (৮ নম্বর) গাড়ির যাত্রী সাইফুল বলেন, এখন আর আগের মতো হরতাল নেই। হরতাল হলেও গাড়ি চলে, অফিস-আদালত চলে প্রতিদিনের মতো।
একই কথা জানান গাড়িচালক বিশু। তিনি বলেন, হরতাল জেনেও রাস্তায় এসেছি, পেটে ক্ষুধা আছে। তাছাড়া হরতালে এখন গাড়ি ভাঙচুরের সম্ভাবনা নাই তাই যাত্রীরাও ঘর থেকে বের হয়।
এদিকে, এ অবস্থানকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। যেকোনো অপতৎপরতা রোধে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, সড়কে অবস্থান নেওয়া হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সড়ক আটকে জনগণের ভোগান্তি না করার জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হরতালের সমর্থক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকার অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারছে না। কিন্তু তারা গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, এতে লাভ কার? গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। এর ফলে বাড়ি ভাড়া বাড়বে, বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
হরতালের আরো খবর:
সিলেটে: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলার হরতাল চলছে সিলেটেও। তবে এতে সাড়া নেই সাধারণ মানুষের। গতকাল রোববার সকালেই হরতালের সমর্থনে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাম নেতাকর্মীরা। মিছিলে পিকেটিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তবে অন্যান্য দিনের মতোই রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। এদিন হরতালের সমর্থনে থাকা বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা নগরের চৌহাট্টা এলাকাসহ দুই থেকে তিনটি স্থানে পিকেটিং করেছে। এ ছাড়া সিপিবি, বাসদ ও বাসদ মার্কসবাদীসহ সম্মিলিত বাম গণতান্ত্রিক জোট কোর্ট পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি সুরমা টাওয়ার, আম্বরখানা, ওসমানী শিশু পার্কসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে পূণরায় কোর্ট পয়েন্টে এসে সমবেত হয়। এ সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন হরতালের সমর্থনকারীরা। বর্তমানে সরকারবিরোধী সর্ববৃহৎ জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে হরতালে কোনো সমর্থন না আসলেও তাদের দুই প্রধান শরিক বিএনপি ও গণফোরাম এতে সমর্থন দিয়েছে। তবে হরতালে এ দু’টি দলের কাউকেই মাঠে থাকতে দেখা যায়নি। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা জানান, হরতালে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরের প্রতিটি মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি।
বরিশাল: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলার হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি বরিশালে। তবে হরতাল সফল করতে বৃষ্টিতে ভিজেই সড়কে অবস্থান নিয়েছে বাম নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। গতকাল রোববার নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। এদিন ভোর ছয়টা থেকে নগরের সদর রোডের কাকলীর মোড় ও জেলখানার মোড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে চালকদের অনুরোধ জানায় হরতালের সমর্থনকারীরা। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ছয়টায় জেলখানা মোড়ে হরতালের সমর্থনে হাতে লাল পতাকা নিয়ে মিছিলও করেন তারা। পরে সকাল পৌনে সাতটার দিকে যান চলাচল না করার আহ্বান জানিয়ে নগরের কাকলীর মোড় এলাকায় মিছিল বের করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তবে সোয়া আটটার দিকে কাকলীর মোড়ে অবস্থান নেওয়া হরতাল সমর্থনকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। সে সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়।
হরতাল সমর্থনকারীরা বলছে, কোনো পিকেটিং নয়, হরতালের বিষয়বস্তু জনগণ ও চালকদের বুঝিয়ে তাদের যানবাহন না চালনার অনুরোধ করা হচ্ছে।
তবে এই হরতালে নগরীর জীবনযাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। লঞ্চ ও বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল এবং নগরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরজুড়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রাজশাহী: গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার দেশের অন্যান্য জেলার মতো রাজশাহীতেও অর্ধদিবস হরতাল পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সকাল ৬টা থেকে এই হরতাল শুরু হয়েছে। চলে দুপুর ২টা প্রর্যন্ত। তবে সকালে সরেজমিনে রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড়, সিঅ্যান্ডবির মোড়, লক্ষ্মীপুর মিন্টু চত্বর, গ্রেটাররোড, শিরোইল বাস টার্মিনাল, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, শালবাগান, নওদাপাড়া আম চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হরতাল চলছে ঢিলেঢালাভাবে।
রাজশাহীতে হরতালের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনও যথাসময়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। হরতালের সমর্থনে কোথাও কোনো পিকেটিং হয়নি।
তবে হরতালের সমর্থনে মহানগরীতে মিছিল করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সকালে মহানগরীর সাহেববাজার এলাকায় মিছিলটি বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেববাজার এলাকায় সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তবে রাজশাহীতে জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। এ ছাড়া সকাল থেকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
খুলনা: গ্যাসের দাম বাড়ার প্রতিবাদে সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। হরতালের কোনো প্রভাব নেই খুলনায়। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। মহানগরের পিকচার প্যালেস মোড়ে হরতাল সমর্থনে সকালে একটি সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন ছাড়া হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে নগরে কোনো মিছিল-সমাবেশ হয়নি।
এদিকে, হরতাল চলাকালে খুলনায় সকাল থেকেই ভারী যান চলাচল করছে। স্বাভাবিক দিনের মতোই খুলেছে দোকানপাট, মার্কেট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে। অফিস-আদালতে উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, হরতালের কোনো প্রভাব নেই খুলনায়। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
বগুড়া: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলার হরতালে স্বাভাবিক রয়েছে বগুড়া। ভোর থেকেই স্থানীয় রুটগুলোতে অন্যদিনের মতোই শুরু হয় যান চলাচল। গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে শহর ও মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। তারা শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে মিছিল করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজেই হরতালকে সফল করতে মিছিল করেন বাম জোটের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কেও চলতে দেখা যায় দূরপাল্লার বিভিন্ন যানবাহন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের যান চলাচলই বাড়তে থাকে।
শহরের ঠনঠনিয়ায় অবস্থিত আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনাল ও চারমাথার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায় অন্যদিনের মতোই। দূর-দূরান্ত থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলোও টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্য দুই চুলায় ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার ঘোষণা দেয়া হয়। ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল ডাকে বাম জোট। পূর্বে ঘোষণা দেয়া সময় অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে হরতাল শুরু হয়, যা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। বাম জোটের হরতালে সমর্থন দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *