ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৭৩১ নারী-শিশু, মৃত্যু ২৬ জনের

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : এ বছর প্রথম ছয় মাসেই সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
দেশের ১৪টি জাতীয় দৈনিকের তথ্য বিশ্লেষন করে এই তথ্য তুলে ধরে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়েশা খানম জানান, গতবছর সারাদেশে ৯ শ ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় ৬৩ জন নারী ও শিশুকে। অর্থাৎ, গতবছর যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সময়ে এবছর ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ।
এই পরিসংখ্যান বলছে, শেষ ছয়মাসে শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন ৫৪ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৩ জনকে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭০ জন। এছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌতুক, পাচার, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তো ঘটছেই।
এমন বাস্তবতায় বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি, অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মহিলা পরিষদ। একই সঙ্গে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে তারা।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, সকল ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যার সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নারী নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা, বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত সকলের প্রশিক্ষণ সূচিতে নারীর মানবাধিকার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়েশা খানম। তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে বলেন, ‘এখনো বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুকেই প্রমাণ করতে হয় যে সে ধর্ষণের শিকার। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে অভিযুক্তকে প্রমাণ করতে হয় যে সে ধর্ষণ করেনি।
বাংলাদশের আইনেও এই পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে মহিলা পরিষদ। সেইসঙ্গে কোনো পরিস্থিতিতেই ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, এমন প্রচারণার সুপারিশ জানায় তারা। এছাড়া প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রশাসনকে দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, কোনো অপরাধীকেই রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আয়েশা খানম বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান করা সবচেয়ে জরুরি। এজন্য আইনের যথাযথ সংশোধন ও প্রয়োগ হতে হবে। আমরা জানি, আইন প্রনয়ণ একটি দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু যদি আমরা এটাকে জরুরি অবস্থা ধরি তাহলে কেন বিকল্প উপায়ে দ্রুত এই আইন সংশোধন করা যাচ্ছে না? এই পরিস্থিতি কী টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে যাচ্ছে?
গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের হার দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মহিলা পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘হঠাৎ ছয় মাসে এমন কী হলো যে এতো বেশি ঘটছে এই ঘটনা? মনস্তত্বের কী এমন পরিবর্তন হলো সেটা তো গবেষণা করে দেখা দরকার। অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এদের সমন্বয়ে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত গবেষণা করা উচিত।
পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা বাড়াতে, ফলোআপ বাড়াতে অনুরোধ করেন আয়েশা খানম। তিনি বলেন, বাচ্চাদের আমরা ভয়ে অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে রেখে দিচ্ছি, তাদের এতোটাই নিরাপদে রাখতে চাইছি যে তারা স্বাভাবিকভাবে বড়ই হতে পারছে না। অধচ বাচ্চারা তো প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াবে। কিন্তু সেই পরিবেশটা তাদের দিতে পারছি না। অন্যদিকে পরিবারেও তারা নিরাপদ না। মামা, চাচা, ফুফা কারও কাছেই নিরাপদ না। এটা কেন হবে? কেন সমাজের এই পরিবর্তন?
বাতাসে যেমন দূষণ বেড়েছে তেমনি সমাজেও দূষণ বেড়েছে উল্লেখ করে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, সমাজের এই ময়লা পরিষ্কার করতে। বেগম রোকেয়ার মতো বলতে চাই, সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক।
আরেক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে আয়েশা খানম বলেন, দেখা গেছে ধর্ষণের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের একটি বিরাট অংশ তরুণ। তারুণ্যের শক্তির কেন এই অপচয় হচ্ছে তা ভেবে দেখতে অনুরোধ করেন তিনি। এই অবক্ষয় রোধে আইন পরিবর্তন করার ওপর জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন, জেন্ডার সেনসিটিভিটি বোঝানোর ওপরেও গুরুত্ব দেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *