ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রশ্নবিদ্ধ ‘ওপেন টেন্ডার’

অন্যান্য অর্থনীতি জাতীয় ঢাকা বানিজ্য রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) একটি টেন্ডার ডেকেছে। এটাকে ওপেন টেন্ডার বললেও সেখানে কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহকারী টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। একদিকে ‘ওপেন টেন্ডার’ অন্যদিকে দেশ সীমাবদ্ধ করে দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দিতে বিআরটিএ কর্মকর্তারা অসদুপায় অবলম্বন করেছেন।
এ নিয়ে একজন সরবরাহকারী সম্প্রতি বিআরটিএতে কথা বলতে যান। তখন তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান কেন ওপেন টেন্ডার-এর নামে কয়েকটি দেশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো। তার কোনো সদুত্তর দেয়নি বিআরটিএ। তাকে সামনে রেখেই বিআরটিএ-এর কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। যেহেতু ওপেন টেন্ডার সে কারণে যেকোনো সরবরাহকারী তাতে অংশ নিতে পারার কথা। এ কথা স্বীকার করে নিয়ে পরবর্তী মিটিংয়ে বিষয়টি তোলা হবে বলে জানান বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএ-এর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং লোকমান হোসেন মোল্লা-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রি-বিড সভায় আলোচনা করা হবে। দরপত্র প্রস্তুত করতে যে কর্মকর্তা কাজ করেছেন তাকে ফোন দিয়েছিলেন লোকমান হোসেন মোল্লা। তখন ওই কর্মকর্তাও ঠিকমত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এটি নিজেদেরই ভুল বলে অনেকটা স্বীকার করে নেন বিআরটি-এর পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা। তিনি এ দরপত্র আহ্বানকারী।
স্মার্টকার্ড সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাজ আহমেদ শাহরিয়ার অভিযোগ করেন, এভাবে দেশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া কোন একটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা বলেই তার মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রথম বিআরটিএ-তে অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন। তখন কর্মকর্তারা তাকে ৯ জুলাই বৈঠকে অংশ নিয়ে লিখিত মতামত দিতে বলেছেন।
শাহরিয়ার জানান, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিআরটিএ স্মার্টকার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। তবেই যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সব প্রতিষ্ঠানকেই টেন্ডারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, পার্সোনা-লাইজড ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট ড্রাইভিং লাইসেন্স (ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স) পেশাদার চালকদের ক্ষেত্রে ৫ বছর এবং অপেশাদার চালকদের ক্ষেত্রে ১০ বছর মেয়াদে এ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়ে থাকে। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।
টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, তারা স্মার্টকার্ড আমদানি করেন ফ্রান্সের সেলফ কোম্পানির কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন গড়ে চার হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ড সরবরাহে প্রায়ই বিলম্ব করছে এই প্রতিষ্ঠান। এর আগে, একাধিকবার টাইগার আইটির বিরুদ্ধে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। একাধিকবার অভিযোগ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাছেও দেওয়া হয়। এমনকি সরেজমিন পরিদর্শনে একই অভিযোগ পান মন্ত্রী। ডাইভিং লাইসেন্স আমদানিতে দেরির কারণে বিআরটিএ নির্ধারিত সময়ে আবেদনকারীর হাতে লাইসেন্স পৌঁছে দিতে পারে না।
বিআরটিএ-এর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং লোকমান হোসেন মোল্লা জানান, একজন সরবরাহকারী এই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনিও দেখেছেন এটি ওপেন টেন্ডার কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ উল্লেখ করে দেওয়া।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *