ভেতর থেকেই ইমেইল ফাঁস করা হয়েছে: ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক

ডেস্ক রিপোর্ট : ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের গোপনীয় বেশ কিছু ইমেইল ফাঁস হয়েছে, যেসব ইমেইলে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ সমালোচনা করেছিলেন। স্যার কিম ডারখের এসব বার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কড়া সমালোচনা রয়েছে। ওইসব বার্তায় হোয়াইট হাউজকে ‘অদ্ভুত ও নিষ্ক্রিয়’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। ব্যাপক কূটনৈতিক ক্ষোভের মধ্যে হাউজ অব কমন্সে আহবান জানানো হয়েছে যে, পুরো ব্যাপারটির যেন পুলিশি তদন্ত হয়।
এই পুরো বিষয়টি তথ্য ফাঁস না হ্যাকিং না- তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এখানে তথ্য ফাঁস হয়েছে, হ্যাকিং নয়। প্রথমে পুরো ঘটনাটিকে তারা খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে না নিলেও পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
এই তথ্য ফাঁস হওয়া কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ বা ব্রেক্সিট পরিকল্পনার অংশ বলে যেসব ধারণার কথা বলা হয়েছে, সেসব নাকচ করে দিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্যার অ্যালান ডানকান।
তিনি একে একটি ‘জঘন্য তথ্য ফাঁস’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং ভেতর থেকেই এটি ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউজের একটি সূত্র দি টাইমসকে জানিয়েছে, এই ঘটনায় শত্রুভাবাপন্ন কোনও রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়া যায় না।
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখানে বিদেশি কোনও শক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনায় মন্ত্রী, এমপি বা বিশেষ উপদেষ্টাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা শুধু তাদের ব্যাপারেই তদন্ত করবে, যাদের এসব ইমেইলে প্রবেশাধিকার রয়েছে।
একজন রাষ্ট্রদূতের পাঠানো ইমেইল সরকারের ভেতর কতজন কর্মকর্তা দেখার সুযোগ পান, এমন প্রশ্নের জবাবে স্যার অ্যালান বলেছেন, তার ধারণা- প্রায় ১০০ জন ব্যক্তি এটা দেখে থাকতে পারেন, যদিও সেটা ইমেইলের গোপনীয়তার মাত্রার ওপর নির্ভর করে।
যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা সাবেক একজন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এবং স্যার কিমের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেছেন, এখানে বেশ অনেক ব্যক্তির দায় থাকতে পারে, যাদের কেউ এসব ইমেইল ফাঁস করে থাকতে পারেন।
স্যার ক্রিস্টোফার মেয়ার বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে প্রোগ্রামে বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে- কেউ একজন ইচ্ছাকৃতভাবে স্যার কিমের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বের ক্ষতি করার জন্য এটা করেছেন, যাতে তিনি অগ্রহণীয় হয়ে পড়েন এবং তথ্য ফাঁসকারীর পছন্দের কেউ এই দায়িত্ব লাভ করতে পারেন।
অন্যদিকে কূটনীতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে কমন্সে আহবান জানানো হয়েছে যাতে এই ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে।
কমন্সের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টম টুগেনহাট এমপিদের বলেছেন, তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন যে- এক্ষেত্রে একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করা যায় কিনা?
সার অ্যালান বলেছেন, তথ্য ফাঁস নিয়ে কোনও অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তখনই পুলিশ আসতে পারে। তিনি কমন্সে বলেছেন, এখানে যদি অপরাধের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই, পুলিশ এখানে জড়িত হতে পারবে।
গত এপ্রিল মাসে হুয়াওয়ে লিক ঘটনার পর সিভিল সার্ভিসের সাবেক প্রধান লর্ড ওডোনেল জানিয়েছিলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেক্ষত্রে দায়ীদের সনাক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার মোবাইল ফোন এবং ইমেইল রেকর্ড যাচাই করে দেখতে পারেন।
ওদিকে যে ব্যক্তি বা মানুষজন ‘মেইল অন সানড ‘ পত্রিকার কাছে এসব ইমেইল ফাঁস করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টের আওতায় বিচারের জন্য অভিযোগ আনা হতে পারে।
এই আইনের আওতায় বিচারের ঘটনা খুবই কম, তবে একেবারেই যে ঘটেনি তা নয়।
তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে দুই বছর কারাদ- অথবা বড় অংকের জরিমানা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *