নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘মানুষকে অবহেলা করে আওয়ামী লীগ দেশ চালায় না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সরকারপ্রধানের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে মানুষের অধিকার লুট করে কীভাবে দাবি করেন, আপনি মানুষকে অবহেলা করেন না? শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ড. মোশাররফ এ কথা বলেন। বিএনপির এ নেতা বলেন, বাজেটে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। উন্নয়নের নামে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে দেশের জনগণ মনে করছে না যে, তারা ভালো আছে। আর (প্রধানমন্ত্রী) আপনি বলছেন, আপনি তাদের অবহেলা করে রাজনীতি করেন না, মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। এর থেকে আষাঢ়ে কল্পকাহিনী আর কিছু হতে পারে না। দেশের প্রধান দুই নগর ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সরকারের উন্নয়নের ‘জোয়ারের ফসল’ বলে মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, উন্নয়নের নজির তো আমরা দেখছি। ফ্লাইওভার ঠিকই হয়েছে, কিন্তু ফ্লাইওভারের নিচে গত কদিনে দেখা গেল উন্নয়নের জোয়ার, পানির জোয়ার। উন্নয়নের জোয়ারে গত কদিন ঢাকা-চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি এবং দুর্ভোগ হয়েছে, তাহলে এত টাকা খরচ করে কার জন্য উন্নয়ন করলেন? এই জনগণের জন্য। উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির ইঙ্গিত করে সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, আমরা বুঝি কাদের জন্য এই উন্নয়ন করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কে বা কারা ফেইসবুকে কী একটা লিখেছে- এখানে মাথার দরকার হবে ইত্যাদি। সেটা ব্যাপারে আমরা শুনছি যে, গ্রেফতারও হচ্ছে কয়েকজন। কিন্তু সরকার বলে দিল, এর পেছনে বিএনপি আছে। এই যে একটা অপপ্রচার সব কিছুতে। অপপ্রচার করে মিথ্যা বা অসত্য দাবি করে, উন্নয়নের মহীসোপানে বাংলাদেশ, এসব বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাচ্ছে না। জনগণ এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, জনগণের পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অর্থমন্ত্রী করার সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, এবারের অর্থমন্ত্রী দেশের ১০ জন ধনী ব্যক্তির মধ্যে একজন। ধনী ব্যবসায়ীদের কোনো দেশের অর্থমন্ত্রী বানানো হয় না। আমাদের বাংলাদেশে এই প্রথম অর্থমন্ত্রী একজন ধনী ব্যবসায়ী। অর্থমন্ত্রী ধনীদের স্বার্থ দেখছেন দাবি করে তিনি বলেন, তিনি তো তাদের স্বার্থই দেখবেন, জনগণের স্বার্থ দেখবেন না। ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও মোবাইল ফোন ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা বলেন, আমি বলতে চাই, মোবাইল ফোনে যে পরিমাণ ভ্যাট বসিয়েছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছেন-এটা কী জনগণের পক্ষে না বিপক্ষে। জনগণকে আপনারা অবহেলা করেন বলেই নির্দয়ভাবে এসব কর্মকা-গুলো করতে পারছেন। খুন-ধর্ষণ থেকে সমাজবে মুক্ত করতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সংলাপ ডাকতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, গুম-খুন-হত্যা-ধর্ষণ আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে, পচন ধরেছে। এই মহামারি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।মোশাররফ বলেন, বর্তমান সরকার অস্বাভাবিক সরকার। তারা অস্বাভাবিভাবে দেশ চালাচ্ছে। অস্বাভাবিক সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। এ সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যতোই দাবি করুন, তিনি জনগণের জন্য কাজ করছেন, সেটা সঠিক নয়। কারণ জনগণের জন্য কিছু করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত এখনই যেটা করা যেতে পারে, দেশকে রক্ষা করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলতে পারি, তিনি জাতীয় একটি সংলাপ আহ্বান করে শিগগিরই একটা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে ‘গুম-হত্যা-ধর্ষণের মহামারীর কবলে বাংলাদেশ আতঙ্কিত নাগরিক জীবন ও সরকারের ভুমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মোশাররফ। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, শাহ নেছারুল হক, ফরিদউদ্দিন, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির সাহিদুর রহমান তামান্না বক্তব্য রাখেন।