বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ ভারতের কিছু অংশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকা, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, সিকিম ও নেপালে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এবার এখন পর্যন্ত বন্য পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে ১০টি জেলায়। বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস জানাচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ- মেঘনা অববাহিকা ও হিল অববাহিকার নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়া।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমতলেও একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম।
এ অবস্থায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। পানি ছড়িয়ে পরতে পারে দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত।
বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সিলেট, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজবাড়ী ও আশেপাশের এলাকা। কেননা, কোনো কোনো নদ-নদীর পানি বেড়ে তীব্র বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী কোনো নদীর পানির সমতল বিপদসীমা থেকে ১ মিটারের বেশি ওপরে উঠলে সেই অবস্থাকে তীব্র বন্যা বলে ধরে নেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পাঁচদিনের এক পূর্বাভাসে বলেছে- ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আগামী ১৮ জুলাই নাগাদ করতোয়ার পানির সমতল চকরহিমপুরে, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধায়, ধলেশ্বরীর পানি এলাসিনঘাটে ১ মিটারের বেশি বাড়বে।
ওই পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২১ জুলাই নাগাদ যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, কাজীপুর, পদ্মার পানি গোয়ালন্দে বিপদসীমার এক মিটারের বেশি বেড়ে তীব্র বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। আর এসব এলাকার অন্যান্য নদ-নদীর পানি এ সময় বিপদসীমার এতো ওপর দিয়ে প্রবাহিত না হলেও ১ মিটারের মধ্যেই থাকবে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি বিস্তৃত হবে দেশের মধ্যাঞ্চলে।
বন্যার এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। তবে পানি নেমে যেতে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমা অতিক্রম করবে না। এক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার জন্য কোনো শঙ্কা নেই।
বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূইঁয়া জানিয়েছেন, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানিই বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ১৫টি নদ-নদীর পানি ২৩টি স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি সুনামগঞ্জ, সিলেট ও কানাইঘাটে, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট, শেওলা ও আমলশীদে, মনুর পানি মৌলভীবাজার ও মনু রেলওয়ে ব্রিজে, ধলাইয়ের পানি কমলগঞ্জে, খোয়াইয়ের পানি বাল্লায়, সোমেশ্বরীর পানি কমলাকান্দায়, কংসের পানি জারিয়াজাঞ্জাইলে, হালদার পানি নারায়ণহাটে, সাঙ্গুর পানি দৌহাজারী ও বান্দরবানে, চিরিংয়ায় মাতামুহুরীর পানি, ধরলার পানি কুড়িগ্রামে, তিস্তার পানি ডালিয়ায়, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী ও নুনখাওয়াতে এবং যমুনার পানি ফুলছড়ি ও বাহাদুরাবাদে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।