বিশেষ প্রতিবেদক : মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ আদান প্রদানের পরিষেবা ‘বিকাশ’ এর নাম করে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতে বসেছে একটি অসাধু চক্র। মানুষের না জানার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
রোববার এক গণমাধ্যমকর্মীর বিকাশ অ্যাকাউন্টের সাথে সংযোগ আছে এমন মোবাইল নম্বরে +৮৮০১৮৪৩৬৩০১৮১ নম্বর থেকে ফোন করে বিকাশের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে মামুন শাহেদ নামে একজন জানায়, অবৈধ আর্থিক লেনদেন রোধে সমস্ত ‘পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্ট’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টে কোন টাকা থাকলেও তা তিনি আর তুলতে পারবেন না। এখন গ্রাহকদের সুবিধার্থে তারা ফোন করে গ্রাহকের তথ্য মিলিয়ে অ্যাকাউন্টটি আবারো চালু করে দেয়ার কাজ করছেন।
এই পর্যায়ে গ্রাহককে একটি কোড নম্বর (*৩৩*০০০#) দিয়ে ওই প্রতারক বলে, আপনি এটা ডায়াল করে দেখুন, আপনি নিজেই দেখতে পাবেন, অ্যাকাউন্টে বন্ধ হয়ে যাবার তথ্যটি। যদিও সেই কোড ডায়াল করলে কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। পরে ওই প্রতারক বলে, ওই গণমাধ্যমকর্মীর পাসওয়ার্ডটি জানতে চায় এবং বলে যে পাসওয়ার্ডটি আসলে তাদের কাছে রয়েছে, শুধু গ্রাহকের পরিচয় কনফার্ম হওয়ার জন্য এটি জানতে চাওয়া হচ্ছে।
এসময় ওই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, কোনো কারণেই বিকাশ থেকে গ্রাহকের পাসওয়ার্ড বা পিন কোড জানতে চাওয়ার কথা নয়, তাহলে তারা কেন জানতে চাচ্ছেন? তারা বলে, এই তথ্য না দিলে শুধু বিকাশ অ্যাকাউন্টটি নয়, যে মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে। এবং ওই নম্বরের সাথে সংশ্লিষ্ট আইডি নম্বর দিয়ে আর কোনো সিম কেনাও যাবে না। তাই এক্ষেত্রে পিন কোডটি বলা খুবই জরুরী।
ওই গণমাধ্যমকর্মী পিন কোড দিতে রাজী না হলে ওই প্রতারক তাকে বার বার ফোন করে পিন নম্বর দিতে বলতে থাকে। এসময় ওই গণমাধ্যমকর্মী নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিলে ওই প্রতারক খারাপ আচরণ করে ফোন কেটে দেয়।
বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ওই ধরনের কোনো কর্মকা- তারা পরিচালনা করছেন না। এইসব প্রতারণা থেকে বাঁচতে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ৪টি সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। এসব অনুসরণ করলে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
১. নিজের বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর ও একাউন্ট ব্যালান্স কখনো কাউকে বলবেন না। এমনকি +১৬২৪৭ বা এই ধরনের নম্বর থেকে ফোন করলেও পিন নম্বর কিংবা পিন নম্বরের যোগফলও বলা যাবে না।
২. ফোনে কেউ যদি আপনাকে ভুল করে টাকা পাঠানোর কথা বলে ফেরত চায়, আগে একাউন্ট ব্যালান্স চেক করুন।
৩. কারো প্ররোচনায় লটারি জেতার মিথ্যা আশায় কোনো লেনদেন করবেন না।
৪. ফোনে শুধু কারো কথা শুনে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারো নির্দেশনায় কোনো নম্বর বা কোড ডায়াল করবেন না বা টাকা পাঠাবেন না।
বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে জানানো হয়, এই ধরনের কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে যতদ্রুত সম্ভব ১৬২৪৭ কল করে বা ফ্রড ম্যানেজমেন্ট টিমকে ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ@নশধংয.পড়স এ ইমেইল করে রিপোর্ট করুন।
গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলে জানা যায়, ওই প্রতারকের দেয়া কোড নম্বর (*৩৩*০০০#) ডায়াল করা হলে সিমের আউট গোয়িং কল বন্ধ হয়ে যায়। আর আউট গোয়িং বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রাহক ভাবেন সত্যিই অ্যাকাউন্ট ও সিম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা ভয়ে নিজের পিন কোড দিয়ে দেয়।
গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ার থেকে জানানো হয়, সিমের আউট গোয়িং বন্ধ হয়ে গেলে #৩৩*০০০০# ডায়াল করলে আবারো সিমের লক খুলে যাবে। একইভাবে *৩৫*০০০০# ডায়াল করলে ইনকামিং কল বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে #৩৫*০০০০# ডায়াল করলে আবারো ইনকামিং কল করা যাবে।
এরকম প্রতারণার ক্ষেত্রে আউট গোয়িং বা ইনকামিং কল বন্ধ হয়ে গেলে ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানায় সিম প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।