লক্ষ্মীপুরে কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নামে প্রতারণা-চাঁদাবাজি-হয়রানী

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরে কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নামে প্রতারনা, চাঁদাবাজি ও সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীদের নানা ভাবে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে। এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রনে চলছে লক্ষ্মীপুর জেলার এই সমিতি। কেন্দ্রীয় কমিটি ভূয়া তথ্য দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে একটি এডহক কমিটি অনুমোদন করে আনলেও তার কোন কার্যক্রম কারো চোখে পড়েনি। বরং এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে অনেক আগেই। কমিটির কোন কার্যক্রম না থাকলেও এক ব্যাক্তির ইশারায় পুরো লক্ষ্মীপুরের ওষুধ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে আছে।
প্রতিবাদ করার কারো সাহস নেই। প্রতিবাদ করলেই তাকে শিকার হতে হয় নানা হয়রানী ও হুমকির। তারপরও ভুক্তভোগীরা বসে নেই। তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একাধিক অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ করেছে। এক ব্যক্তি হল উত্তম কুমার দেব নাথ। তিনি আগ্রাবাদ ফার্মেসির মালিক।


বিজ্ঞাপন

তার অত্যাচারের শিকার শুধু ওষুধ ব্যবসায়ীরাই নয়, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিরাও।
এ উত্তম কুমার দেব নাথের অসংখ্য অনিয়ম, প্রতারণা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আত্মসাত ও হয়রানীর অভিযোগ থাকলেও কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নেতা সেজে এ সেক্টরের ‘গড ফাদার’ হয়ে উঠেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট দাখিল করার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল এর ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স ভর্তি ফি নির্ধারন করা ছিল ৩ হাজার ৮শ ৬০টাকা।
কিন্তু উত্তম কুমার দেব নাথ আদায় করেন ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০টাকা পর্যন্ত। টাকা আদায়ের রশিদও কাউকে দেয়া হয়নি।
পুরাতন সদস্যদের নবায়ন এবং নতুন সদস্য ৫০০ টাকা করে আদায় করে অসংখ্য ব্যবসায়ীদের সদস্য না করে সে টাকা আত্মসাত করেছে।

প্রথম দফায় ২ জুলাই ২০১৯ সালে ভূয়া তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ৬ মাসে এডহক কমিটি এনে কোন কাজ না করে নিজেই নানা প্রতারনার মাধ্যমে নিজের স্বার্থে নানান অজুহাতে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ আদায় করে চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটির কোন শর্তই সে পালন করেনি।
২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবরে মেসার্স আবুল ফার্মেসির মালিক মো. আবুল কাশেম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বরাবরে উক্ত এডহক কমিটির নিষ্ক্রিয়তা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ এনেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় অনিয়ম ও অর্থ তছরুপের কারনে পুর্বের কমিটি বাতিল হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি ৬মাসের জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটির গঠন করা হয়।

শর্ত ছিল এম আর পি বাস্তবায়ন, সমিতির সদস্য সংগ্রহ, ফার্মেসি ফাউন্ডেশন কোর্স অব্যাহত রাখতে হবে।

উক্ত এডহক কমিটি কোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফার্মেসি ফাউন্ডেশন চালু করা হলেও তা কেমিস্টদের না জানিয়ে নিজের স্বার্থে গোপনে চালিয়েছে।

২০১৯ এর ২১ অক্টোবর বোর্ড অফ ডিরেক্টর বরাবরে একটি আবেদন করে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের প্রধান ওষুধ ব্যবসায়ী মেসার্স মন মোহিনী ফার্মেসির মালিক প্রীতিলাল মজুমদার।

আবেদনের বিষয় ছিল লক্ষ্মীপুর জেলার এডহক কমিটির অনিয়মতান্ত্রিক কার্য কলাপ ও কমিটি বাতিল করা।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়,গঠিত আহবায়ক কমিটি প্রতিটি উপজেলা সদর করে সদস্যদের সাথে আলাপ আলোচনা পূর্বক গত ১৮ মার্চ ২০১৯ সালে উপজেলা প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। গোপনে নিজস্ব কয়েক জনের তালিকা কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
পরে ঐ তালিকা অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু, ওই কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটির কোন নির্দেশনা না মেনে নিজের মনগড়া মতে কাজ করে যাচ্ছে। এ কমিটিতে প্রকৃত ওষুধ ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্স ও টিআইএনবিহীন কেমিস্টদেরকে এডহক কমিটির নির্বাহী সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত করে বিভিন্ন অনিয়ম করে যাচ্ছে।
এছাড়াও, দূর্নীতি ও অনিয়মের জন্য যে কমিটি বাতিল করা হয়েছিল, সে কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন উত্তম কুমার দেবনাথ,বর্তমানে এডহক কমিটির তিনি সভাপতি। পাশাপাশি, ফিরোজ আলম, আবুল বাশারও এ কমিটিতে রয়েছেন এবং এরা সবাই অর্থ আত্মসাৎ এর সাথে জড়িত।
উক্ত দূর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য এডহক কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়।
গত ৩০ অক্টোবর ২০১৯ সালে সাধারণ সদস্যগণ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ ওষুধ রাখার জন্য প্রতিটি ফার্মেসীতে ১২০ টাকার ড্রাম ৩৫০ টাকা আদায় করা হয়। এমআরপি বাস্তবায়ন করা হয়নি, নতুন সদস্য সংগ্রহের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কেমিস্ট সদস্যদের নিয়ে সভা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সদস্যদের ভূয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল তথ্য উপস্থাপন পূর্বক এডহক কমিটির অনুমোদন করা হয়।
উক্ত, এডহক কমিটি বাতিল করে উত্তম কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানানো হয়। এতোকিছুর পরেও উত্তম কুমারের অবৈধ কর্মকান্ড থেমে নেই বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে এসব অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করে উত্তম কুমার দেবনাথ বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সে ষড়যন্ত্রের শিকার।