দুর্গত ১১ লক্ষাধিক মানুষ
মহসীন আহেমদ স্বপন : গত একসপ্তাহের টানা অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করেছে জেলা শহরের কয়েকটি এলাকায়। পাঠদান বন্ধ রয়েছে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সরকারি হিসেবে বন্যায় জেলার ৫২টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী অববাহিকায় পানি বেড়েই চলেছে। দেশের কমপক্ষে ২০টি জেলায় বন্যার বিস্তৃতি ঘটেছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা অন্তত ১১ লাখ বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বন্যায় রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে কুড়িগ্রামে পাঁচটি এবং জামালপুরে দুটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীতে পানি আরও বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সেই সঙ্গে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের সব নদীর পানি বাড়ছে। দেশের ৯৩টি নদ-নদীর পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ৬৩টি পয়েন্টে পানি সমতল বৃদ্ধি ও ২৯টি পয়েণ্টে পানি হ্রাস পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতিত দেশের সকল নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের অনেক স্থানে অগামী ২৪ ঘন্টায় মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামি ২৪ ঘন্টায় আত্রাই নদী, বাঘাবাড়ি ও পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লালমনিরহাট, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামি ২৪ ঘন্টায় উন্নতি হতে পারে। রোববার ১৪টি নদীর ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।পানি পরিস্থিতি ১টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ১টি পয়েন্টের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় (গত সোমবার সকাল ৯ টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত) বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর:
উত্তরাঞ্চল: কুড়িগ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯ উপজেলার পানিবন্দি এখন ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। ৮৯৯ হেক্টর জমির ফসল, ৭১ কিলোমিটার রাস্তা ও ২৭৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালমনিহাটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ উপজেলা। এখানকার ৯০৯৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাড়ে তিন হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি হিসাবে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ২০ ইউনিয়নের ১৬ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহসান হাবিব জানান, বন্যাক্রান্ত লোকজনের জন্য এ পর্যন্ত ২৪৫ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবারের দেড় হাজার প্যাকেট ও সাড়ে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী, খারুয়া ও ইটাপোতা গ্রামের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাঘাট ইউনিয়নের বনগ্রাম, শিবেরকুঠি, চর শিবেরকুঠি, বোয়ালমারী চর ও আলোকদীঘি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, বন্যায় জেলার ৩২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধা জেলার ৭ উপজেলার ১ লাখ ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানির তোড়ে গত সোমবার আরও তিনটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩১টি গ্রাম ও ওইসব এলাকার রাস্তাঘাট এবং ফসল নতুন করে পানিতে ডুবে গেছে। জেলার বন্যাকবলিত চার উপজেলা সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদরের ২১৩ গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার্তরা বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের সঙ্গে খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু-পাখি রাখা নিয়ে পড়তে হয়েছে বিপাকে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, গত সোমবার রাতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে, গত সোমবার ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে চারটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরের ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খোলাহাটি ইউনিয়নে কুঠারপাড়া এলাকায় ৫০ ফুট, গোদারহাট এলাকায় সোনাইল বাঁধের ১০০ ফুট ভেঙে গিয়ে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানির তোড়ে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া এলাকায় বাঁধের ১০০ ফুট অংশ ধসে গেছে, আর ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১৬ গ্রাম। পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ফুলছড়ি উপজেলায় তিনটি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বগুড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯৮টি গ্রামের ৬৭ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। ৮ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে ৩৮৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে বইছে। এনায়েতপুরের ব্রাহ্মনগাতী, আড়কান্দি, হাটপাচিল ও কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, বাঐখোলা পাটাগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চল: চট্টগ্রাম জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, ফটিকছড়ির বেশিরভাগ ও অন্যান্য উপজেলা আংশিক প্লাবিত হয়ে দুর্গত সাড়ে চার লাখ মানুষ। ৬৭৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৯০৮৫টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা মহাসড়ড়ের উপর দিয়ে ২ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ দু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায়। চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম জেলায় বন্যায় ২ জন ও নগরে পাহাড়ধসে ২ জন নিহত হয়েছেন। কক্সবাজারে ৭ উপজেলায় পানিবন্দি ৪১ হাজারেরও বেশি মানুষ। ১৭৪০ হেক্টর বীজতলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বান্দরবানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ৫টি। বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রুমা উপজেলায় নদীর ¯্রােতে ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। খাগড়াছড়ির ১০৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। রাঙামাটির বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।
সিলেট অঞ্চল: সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ উপজেলার ১ লাখ ৪ হাজার লোক দুর্গত অবস্থায় রয়েছে। ১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ উপজেলার ২ লাখ ৯৬ হাজার মানুষ এখন বন্যাদুর্গত। জেলায় ১ হাজার ১৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৫ হাজার ৩৯৬টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। বামনপাশায় নির্মাণাধীন ২০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট নষ্ট ও ফসলহানি রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোণায় বন্যায় তিনটি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার সকালেও বজ্রপাতে কলমাকান্দায় একটি ছেলে মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
যমুনায় বিপৎসীমার ১৩৭ সে.মি. ওপর : সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে যমুনার পানির স্তর। ২০১৭ সালে ১৩৪ সেন্টিমিটার পানির রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকার পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটারে ওপরে অবস্থান করছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আবদুল মান্নার এ তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২০১৭ সালে এ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানি বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ছিল ১২১ সেন্টিমিটার ওপর। এদিকে বন্যায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যত পানির নিচে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, বাসভবন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়সহ সব দাফতরিক কার্যালয় এখন পানির নিচে।এরইমধ্যে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রেল লাইনে পানি উঠায় ঝুঁকি নিয়ে রেল চলছে। যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে রেল যোগাযোগও। উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে ইউপি’র চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। উপজেলা সদর থেকে গুঠাইল বাজার, উলিয়া বাজার, শিংভাঙ্গা, কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ইসলামপুর-উলিয়া এবং ইসলামপুর-গুঠাইল ও ইসলামপুর-কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামপুরের ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে রয়েছে। উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি, দেওয়ানপাড়া, ডেবরাইপেচ, বলিয়াদহ, সিংভাঙ্গা, পশ্চিম বামনা, পূর্ববামনা, গিলাবাড়ী, সাপধরী ইউনিয়নের আকন্দ পাড়া, পশ্চিম চেঙ্গানিয়া, পূর্ব চেঙ্গানিয়া, ওকাশাড়ীডোবার, কুলকান্দি ইউনিয়নের বেরকুসা, টিনেরচর, সেন্দুরতলী, মিয়াপাড়া, বেলাগাছা ইউনিয়নের কাছিমারচর, দেলীপাড়, গুঠাইল, পাথর্শী ইউনিয়নের শশারিয়াবাড়ী, মোরাদাবাদ, মুকশিমলা, হাড়িয়াবাড়ী পশ্চিম মুজাআটা, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ওলিয়া, রামভদ্রা, কাজলার অঞ্চলগুলোর বিস্তীর্ণ জনপদের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত তিনদিনে বন্যার পানির তীব্র ¯্রােতে বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়ার চর, বরুল, চিনাডুলী ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়া নোয়ার পাড়ার বৌশেরগড়সহ প্রায় শতাধিক বসতভিটা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের উঁচুজায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পশ্চিমাঞ্চলে ৮২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও পৌর শহরের নতুন নতুন এলাকা চাড়িয়া, মোজাজাল্লা, বেপারীপাড়া প্লাবিত হয়েছে বলে কাউন্সিলর অঙ্কন কর্মকার ও মহন মিয়া জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী যমুনা থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ইসলামপুরের সাপধরী, চিনাডুলি, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পাথর্শী ও ইসলামপুর সদর ইউনিয়নগুলোর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা, পিংনা, আওনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় বকশীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইসলামপুর উপজেলায় ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর-উলিয়া রাস্তার খরকা এলাকায় কাঠের পুরনো সেতুটি বন্যার পানির ¯্রােতে ভেঙে যাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চত্বরও আশপাশের বাসাবাড়িতে একবুক পানি।