আওয়ামী লীগ কার্যালয় ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশায় সহযোগী সংগঠনগুলো

জাতীয় ঢাকা রাজধানী রাজনীতি

মহসীন আহমেদ স্বপন : বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের পুরনো কার্যালয়ের জায়গায় নতুন ভবন উদ্বোধনের পর বছর গড়াতে চললেও সেখানকার স্থায়ী ঠিকানায় ফিরতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনগুলোর কয়েকজন নেতা বলেছেন, নতুন ভবনে তারা বিভিন্ন সময় সাংগঠনিক সভা, সংবাদ সম্মেলন করতে পারলেও স্থায়ী কার্যালয় না মেলায় তাদের এখন অনেকটা উদ্বাস্তু অবস্থা।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পুরনো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভেঙে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ১০ তলা ভবন।
২০১৮ সালের ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন ভবন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে ওপরের সবগুলো ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের। ভবনে রয়েছে ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই পুরো ভবনটি থাকবে ওয়াই-ফাইর আওতায়।
ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় সাজানো হয়েছে দলের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ; সপ্তম তলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। নবম তলায় সভানেত্রীর অফিস। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়েছে।
দশম তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। দ্বিতীয় তলায় মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ রয়েছে। কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তৃতীয় তলায়ও ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকছে। এই ফ্লোরের সামনের অংশে আছে ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল।
উদ্বোধনের পর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মাঝে মধ্যে আওয়ামী লীগ, চৌদ্দ দলসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভা, সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তার কার্যালয়ে আসেন মাঝেমাঝে। সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত তিনবার এখানে অফিস করেছেন। আর নতুন ভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে দুইবার।
কিন্তু এক বছর আগে উদ্বোধনের পর থেকে সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কার্যালয়ের অপেক্ষায় যেন শেষই হচ্ছে না। কবে নাগাদ তারা কার্যালয় বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তাও কেউ বলতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ নতুন ভবনের কাছেই দুটি ভবনে (১৯ ও ২৫ নম্বর) ভাড়া করা কার্যালয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ছাত্রলীগকে আপাতত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যালয় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ। সংগঠন তিনটি ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই পুরনো ভবন ছাড়লেও এখনও নতুন কার্যালয় বুঝে পায়নি। সংগঠনিক কোনো কর্মকা- তাদের সারতে হচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগের ভাড়া করা কার্যালয়ে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলায় বসছেন প্রায় দুই বছর ধরে। একই ভবনের তৃতীয় তলায় ছাত্রলীগ, চতুর্থ তলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পঞ্চম তলায় তাঁতী ও শ্রমিক লীগের কার্যালয়। আর ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ভবনের নিচতলা ব্যবহার করছে যুবলীগ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাইনবোর্ডে পুরনো কার্যালয়ের ঠিকানা, কিন্তু সংগঠনের কার্যক্রম চলছে ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ভাড়া ভবনে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাইনবোর্ডে পুরনো কার্যালয়ের ঠিকানা, কিন্তু সংগঠনের কার্যক্রম চলছে ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ভাড়া ভবনে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের আশা, সুবিধামত সময়ে কার্যালয় বণ্টন করা হবে।
তিনি বলেন, এখনও বণ্টন করে দেওয়া হয়নি। নেত্রী সুবিধামত সময়ে করে দেবেন। আর আমরা তো ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আছিই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, এখনও আমাদের জন্য কিছুই করা হয়নি।
কবে নাগাদ নতুন কার্যালয়ে উঠতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যপারে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের সভাপিতম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। কোনো কথা না বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। আওয়ামী লীগের একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *