বিশেষ প্রতিবেদক : প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ ও ধ্বংস এবং অভিযান পরিচালনা করায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, এ কাজ প্রশংসনীয়। তবে এটা চলামান রাখতে হবে। জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া ওষুধের পাতায় (স্ট্রিপ) স্পষ্ট ও বড় হরফে বাংলা এবং ইংরেজি লেখায় মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য লেখার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছেন আদালত।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৮ জুন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে হাইকোর্ট সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
এ আদেশ অনুসারে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশে অধিদপ্তর বিভিন্ন কোম্পানিকে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করে কোম্পানিগুলো। ধ্বংস করা ওষুধের দাম ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৭ টাকা। চার হাজার ৫শ ৮৭টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৫২টি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে এক কোটি চার লাখ ৮৯ হাজার দুইশ টাকা। সিলগালা হয়েছে পাঁচটি ফার্মেসিকে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি।
আদালতে কামরুজ্জামান কচি বলেন, আইন অনুসারে এটা চলমান প্রক্রিয়া। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
সারাদেশের পাশাপাশি মিটফোর্ডে অভিযানের বিষয়ে আদালতের প্রশ্নে কামরুজ্জামান কচি বলেন, ১৭টি ফার্মেসিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে আটটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে।
এক পর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। সবখানে পত্রিকা না পৌঁছলেও টিভি আছে। দুর্গম কোনো চরেও টিভি আছে। তাই ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে সচেতনতার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া য়ায় কিনা দেখেন। যদিও এখানে অর্থনৈতিক বিষয় আছে। তারপরও সচেতন করেন। ফিল্ডে (মাঠ পর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে অভিযান) যে রকম অ্যাকশন নিচ্ছেন তেমনি প্রচার-প্রচারণাতেও করতে হবে।
আদালত আরও বলেন, ওষুধে উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্য বড় করে থাকতে হবে। যেন ভিজিবল হয়। অনেকে আবার ইংরেজি বোঝে না। কিন্তু আমাদের ওষুধ রপ্তানি হয়। তাই বাংলা ও ইংরেজিতে এগুলো থাকতে হবে।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অভিযান চালানো হয়েছে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তো বিষ হয়ে যায়। তাই জনসচেতনতা দরকার।
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান চলবে। যথেষ্ট কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য আপনাদের নির্দেশে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, যথাযথ স্টেপ নেওয়ায় অ্যাপ্রিশিয়েট করছি। এ অভিযান প্রশংসনীয়। এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার। যারা উৎপাদন করছেন তাদেরও। কারণ ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হয়। এখানে সেফ থাকলে বিদেশে সুনাম হবে।
এসময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, আইন অনুসারে ওষুধের মেয়াদ ভিজিবল হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
তিনি ওরস্যালাইন, ইনজেকশন, হাঁপানিরসহ কয়েকটি ওষুধ আদালতে উপস্থাপন করেন। ওইসব ওষুধ দেখে আদালত বলেন, মেয়াদ আছে। তবে সেটা বোঝার উপায় নেই। অনেক মানুষ এটা পড়তে পারবে না। এগুলো ভিজিবল হওয়ার দরকার।
বিষয়টি দেখার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিকে অবহিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২২ আগস্ট দিন ঠিক করেন আদালত।
গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন ১৭ জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।