অস্বীকার ডিপো ম্যানেজারদের
ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা: মেয়র খোকন
বিশেষ প্রতিবেদক : বেশি যাত্রী না পেলে প্রারম্ভিক স্থান থেকে ছেড়ে যায় না রাজধানীর ধানমন্ডি-আজিমপুর রুটের চক্রাকার বাসগুলো। প্রতি ৫ মিনিট পর পর নির্ধারিত স্টপেজগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বাসগুলো আসার কথা থাকলেও আধঘণ্টা পার হয়ে গেলেও সেই কাঙ্খিত বাহনটির দেখা পান না যাত্রীরা। দিনে মাত্র ৫ থেকে ৬টি ট্রিপ দিয়েই শেষ হয় প্রতিটি বাসের কার্যক্রম। আর বেশি যাত্রীর আসায় বেশিরভাগ সময়ই বাসগুলোকে ‘বিশ্রামে’ রাখা হয়। এর ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে সার্ভিসটি চালু করা হয়েছে, সেটি ভেস্তে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এই রুটের যাত্রীদের।
নগরবাসীর আরামদায়ক ও নিরাপদ সেবা নিশ্চিতের জন্য চলতি বছরের ২৭ মার্চ কলাবাগান মাঠের সামনে থেকে এ সার্ভিস উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। দূরত্ব বুঝে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া বাসটিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২০-৩০ টাকা।
শুরুতে বলা হয়েছিল, বাসগুলো নির্ধারিত রুটের ৩৬টি স্টপেজে থামবে। সেখানে যাত্রীদের জন্য থাকবে টিকিট কাউন্টার। টিকিট কিনে লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে উঠতে হবে। ৫ থেকে ১০ মিনিট পরপর রাস্তার দুই পাশেই বাস পাওয়া যাবে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১২টি স্টপেজে থামে বাসগুলো। বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কথা থাকলেও বর্তমানে এই রুটে ১৫টি বাস চলাচল করছে।
এদিকে, রাজধানীর এই রুটটিতে যানবাহনের চাপ কমিয়ে যানজটমুক্ত করার জন্য বর্তমানে রিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের চাপ আরও বেড়েছে। কিন্তু বাসগুলো বেশি যাত্রী পাওয়ার আশায় আধঘণ্টা বা তারও বেশি সময় পর পর স্টপেজে যাচ্ছে। এছাড়া, শুক্র ও মঙ্গলবার বাসের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসি সার্ভিসটির কয়েকজন চালক বলেন, বেশি যাত্রী তোলার জন্য অনেক দেরি করে প্রারম্ভিক কাউন্টার থেকে বাস ছাড়া হয়। ফলে বাসের ৫১টি আসনের বাইরেও দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা হয়। যদি অল্প সময় পর পর বাস ছাড়া হয় তাহলে যাত্রী কম পাওয়া যায়। সে কারণে ট্রিপ শেষ করে আসার পর বাসগুলোকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যেন সড়কে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিআরটিসির অন্যান্য বাসের মতো এই রুটের বাসগুলোও চুক্তি ভিত্তিতে পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কারণে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রতিটি ট্রিপে ৫১টি আসনের বিপরীতে এক হাজার ৫৩০ টাকা আয় করেন। এর বাইরে দাঁড়িয়ে নেওয়া যাত্রীদের থেকে কমপক্ষে ২০ টাকা করে আয় করা হয়। কিন্তু তারা বিআরটিসিকে প্রতি ট্রিপের বিপরীতে ১ হাজার ৫০০ করে টাকা পরিশোধ করেন। এজন্য বাসে আসন সংখ্যা খালি থাকলে আয় হয় কম। সে কারণে বেশি যাত্রীর আশায় অধিকাংশ সময় বাসগুলোকে ‘বিশ্রামে’ রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো ছাড়া হয়। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ডিপো ম্যানেজাররা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টায় আজিমপুর ইডেন মহিলা কলেজের উত্তর গেটে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে তখনও সার্ভিসটির ৪টি বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাসগুলো হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫১৩৩, ঢাকা মেট্রো-ব- ১৫-৪৯৯৪, ঢাকা মেট্রো-ব- ১৫-৪৯৮৮ ও ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৪৯৮৭। অথচ তখন ইডেন মহিলা কলেজের সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভিড়। কিন্তু তখনও বাসগুলো কাউন্টার থেকে লাইনে দেওয়া হয়নি।
এ সময় মাস্টার্স পরীক্ষার্থী নিলুপা মনি বলেন, বাসের সামনে অন্তত আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। চারটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। একটি বাসও ছাড়ছে না। কলেজের সামনে গেটে অনেক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছেন। বাসগুলো পেলে তারাও উপকৃত হতেন।
বিষয়টি নিয়ে বাসের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। বিষয়টি জানিয়ে তাকে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ধানমন্ডি-আজিমপুর রুটে ৫ থেকে ৭ মিনিট পরপর চক্রাকার বাস স্টপেজে আসার কথা। কিন্তু এর ব্যত্যয় যদি হয় তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. নায়েব আলী বলেন, আসলে বাসগুলো চুক্তিভিত্তিক বা টার্গেট ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি। তবে, যাত্রী কম থাকলে খরচ কমানোর জন্য দেখে-শুনে একটু লেট করে ছাড়া হয়। আমাদের নিজস্ব লোক ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা জনবলের মাধ্যমে এই বাসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাসগুলো তারা দেখাশোনা করছেন। তিনি আরও বলেন, এই বাসের চাহিদা অনেক বেশি। যাত্রীর চাপও রয়েছে। তবে, ছুটির দিনে বাসের সংখ্যা একটু কমিয়ে দেওয়া হয় বলেও তিনি স্বীকার করেন।