মধ্যাঞ্চলে বন্যার আরও অবনতি ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী সারাদেশ

গাইবান্ধায় ৫ জনের মৃত্যু
দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটে যানজট
ত্রাণ বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিবেদক : বন্যার তোড়ে ভাঙছে শত শত কিলোমিটার সড়ক। প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে রেললাইন। বিকল্প পথে যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে সাধারণ মানুষের। বন্যার পানির তোড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই সাধারণ মানুষের। তার উপর পানিতে সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন।
দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতিতে আগ্রাসী যমুনা ভাসিয়ে দিচ্ছে একের পর এক গ্রাম। উত্তরেও ব্রহ্মপুত্র আর ঘাঘটের পানি উপচে তলিয়ে আছে চর-দ্বীপচর ও ফসলী জমি। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বানের জলে ভাসছে জনপদ। ডুবছে বসতবাড়ি, ক্ষেতের ফসল। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার প্রতীক্ষায় বানভাসিরা।
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এছাড়া যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে থাকায় উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে।
শনিবার ‘বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা’ নিয়ে এক প্রতিবেদনে সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গা-পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদী ছাড়া অন্যান্য সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উজানের প্রদেশগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘটায় পদ্মা নদী সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বৃদ্ধির কারণে মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
তিনি জানান, টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে। এছাড়া উন্নতি হতে পারে বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির।
মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি ঘটাবে : বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, যমুনা নদীর পানি ফুলছড়িতে ১২৯ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১৩৭ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ১১৬ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ১১১ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জে ৯৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট, পুরনো সুরমার পানি দিরাই, তিতাসের পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেঘনার পারি চাঁদপুর, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধা, করতোয়ার পানি চকরহিমপুর, আত্রাইয়ের পানি বাঘবাড়ি, ধলেশ্বরীর পারি এলাশিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের ভেতরে ও উজানের বেসিনে (আসাম) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সবকয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ দিয়েছে, যা উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে এবং তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পূর্বে রেকর্ডকৃত সবোর্চ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব পড়ে পদ্মায়ও। বিস্তৃত অঞ্চলে বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই বন্যা : বারবার বাঁধ ভাঙে আর সর্বস্বান্ত হয় অভাবী মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের নামে আসে বরাদ্দ কিন্তু কাজের কাজ না হওয়ায় নওগাঁয় অকাল বন্যার কবলে প্রতি বছরই নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ জন্য দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি আর অনিয়মকে।
বাঁধ ভেঙে অকাল বন্যার কবলে নওগাঁর মান্দা ও রাণীনগরের প্রায় দু লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। ২০১৭ সালে বাঁধের একাধিক জায়গা ভেঙে গেলে তা সংস্কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে সময় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এলাকাবাসী।
মান্দা ও রাণীনগরে আবারো একই বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর রোপা আউশসহ রবি ফসল। ভেসে গেছে ৫শ’র অধিক পুকুরের মাছ। অকাল এ বন্যায় সহায় সম্বল ফেলে ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন বানভাসি মানুষেরা। বারবার বাঁধ ভাঙার জন্য নির্মাণ কাজে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া আর দায়িত্বে অবহেলা কে দায়ী করছেন বানভাসি অসহায় মানুষ।
আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে না করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন প্রতিনিধিরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। অন্তত বেড়িবাঁধের কাজ করার জন্য বলেছি। কিন্তু তাদের কথা, তারা বেড়িবাঁধের কোনো কাজ করবেন না।
নওগাঁর মান্দা ও রাণীনগরের বাঁধ সংস্কার কাজে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার। আর টেক সই প্রকল্প বাস্তবায়নের আহবান উপজেলা প্রশাসনের।
নওগাঁর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংসু কুমার বলেন, ডিপিপি পাস হয়ে কাজ করতে করতে কিছুটা সময় দরকার হয়। এজন্য এসব সমস্যা হয়। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, সামনের মিটিংয়ে আমরা এই বিষয়টা জোরালোভাবে তুলব। নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর ৭৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ।
গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র আর ঘাঘটের আগ্রাসী রূপে দিশেহারা গাইবান্ধার মানুষ। জলমগ্ন চর-দ্বীপচরের বাড়িঘর। আমন বীজতলা, পাট, সবজি ক্ষেত সবই ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ হারিয়ে চাষিদের মাথায় হাত। প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ।
বগুড়া : বগুড়ায় যমুনার পানি এখনো বইছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ঠাঁই নিয়েছে মানুষ। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ছড়িয়ে পড়ছে নানা পানিবাহিত রোগে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে কিছুটা কমেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি। তবে এখনো তলিয়ে আছে ৯ উপজেলার প্রায় ৯শ’ গ্রাম। মানবেতর জীবন যাপন করছেন ৮ লাখের মতো মানুষ।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে পানির চাপে রানীগ্রাম বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। যমুনার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ৫২টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের তারাইয়ে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে নদী তীরবর্তী এলাকায়। পানিবন্দি ৬ উপজেলার ৩০-৪০টি গ্রামের মানুষ।
ফরিদপুর : পদ্মা নদীর পানি ফরিদপুর পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার চরভদ্রাসন, সদরপুর ও সদর উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে দিন যাপন করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা : বন্যা ও অতি বর্ষণে ভেঙে পড়েছে রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কের পাশাপাশি অনেক জায়গায় ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের অবস্থা শোচনীয়। পুরো বিভাগে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢলের তীব্র স্রোতের সামনে টিকতে পারছে না কোন কিছু। রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙেচুরে ছুটছে বাঁধভাঙা পানি। এরইমধ্যে গাইবান্ধা জেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সাঘাটা ও সাদুল্লাহপুর উপজেলা এবং বালাসীঘাটের সড়ক যোগাযোগ। আর রেলপথে সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন পুরো গাইবান্ধা জেলা। আর বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে চর-দ্বীপচরের বাড়িঘর। প্রত্যন্ত এলাকায় বাস বলে খুব সহজে সাহায্য পৌঁছায় না বানভাসিদের হাতে।
১৬ নদীর জেলা কুড়িগ্রামে ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ৪১টি ব্রিজ-কালভার্ট সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে সড়কের ক্ষতি আরও ৪শ’ কিলোমিটার।
এলাকাবাসী বলেন, রাস্তাঘাট ঠিক করে না বাঁধের কাজ করে না তাই তো রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে।
পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও সাধ্যমত মেরামত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শফিকুজ্জামান বলেন, ছোট খাটো সমস্যার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত জিনিস থাকে লেবারও থাকে। বড় ধরনের কিছু সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করা হয়।
তবে শ্রমিক ও বালু সংকটে জরুরি মেরামত কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা।
গাইবান্ধায় ৫ জনের মৃত্যু : গাইবান্ধা জেলার বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পানির তোড়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে বাঙালি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৩২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নাদীর পানি বিপদ সীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গোাবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ডুবে আছে ফসলি জমি এবং ভেঙে গেছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভাট। বন্যা কবলিত গাইবান্ধা শহরের পানি এখনও নামেনি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ১৪২টি, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৬৬টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৭১ হাজার ২৪ জন।
বন্যায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সাদুল্লাপুর উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৮ জন মানুষ। কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১৭ কিলোমিটার ও বাঁধ ৫৭.৫০ কিলোমিটার। বন্যার পানিতে ১৮টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয় হাজার ৮২১ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। ভেসে গেছে ২ হাজার ৯৪১টি পুকুরের মাছ।
সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বেসরকারি ভাবেও বিভিন্ন সংগঠন প্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং দুর্গম হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা বিঘিœত হচ্ছে।
দিনভর দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটে যানজট : প্রতিদিনের মতো গতকাল শনিবারও পদ্মা নদীতে তীব্র ¯্রােত ও ফেরি সংকটের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল যাত্রীবাহী বাসের চাপ অনেকটাই কম। গতকাল দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ৪ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। দীর্ঘ সময় নদী পারের অপেক্ষায় থেকে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখা ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবু আব্দুল্লাহ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৫টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ২টি ¯্রােতের কারণে চলতে পারছে না। এই রুটে বর্তমানে ১৩টি ছোট-বড় ফেরি চলাচল করছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত ¯্রােতের কারণে নদী পার হতে সময় লাগছে দ্বিগুণ। যে কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ত্রাণ বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ : দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এক যৌথ সভায় এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ৬টি টিম গঠন করা হয়।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলায় বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি ও দলের কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপিকা মেরিনা জাহান।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মো. মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন এমপি ও ত্রাণ ও দুযোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন এমপির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও ফেনী জেলার বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশে সিং এমপি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমণি এমপির নেতৃত্বে মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার বন্যা দূর্গতদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস এমপি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও গোলাম রব্বানী চিনু।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, দলের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য মির্জা আজম এমপি, এডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার, মারুফা আক্তার পপি ও রেমন্ড আরেং।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *