৭০ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী স্বাস্থ্য

*বাংলাদেশের পাশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
*মিটফোর্ডে ভোগান্তিতে রোগীরা
*দায় এড়াতে পারে না সিটি করপোরেশন

মহসীন আহমেদ স্বপন : ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিলেও এখনো টনক নড়েনি রাজধানীবাসীর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্ষাকালীন জরিপে প্রথম দুই দিনে প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই মিলছে এডিসের লার্ভা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায় এড়াতে পারবে না সিটি করপোরেশন তবে, শুধু নগর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে এডিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় সম্ভব নয় হবে না।
বর্ষার আগে ঢাকার দুই সিটিতে মশার ঘনত্ব নির্ণয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরিপে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭টি ও দক্ষিণের ১৪টি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কথা ছিল সে অনুসারে কাজ করবে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সেই জরিপের ফলাফলের চেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে কয়েকগুণ। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই পৌঁছায়নি সিটি করপোরেশনের মশক নিধন টিম, বাড়েনি সচেতনতা। বর্ষাকালীন জরিপের প্রথম দিনেই মিলছে ভয়াবহতা। তবে বরাবরই দায় এড়ানো চেষ্টা নগরবাসীর।
এমন পরিস্থিতি যেন নগরের সব প্রান্তে, এত কিছুর পরেও টনক নড়েনি অনেকেরই।
কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমার মনে হয় গেল কয়েক বছরের তুলনায় ঢাকাতে মশার পরিমাণ অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ববিদ পরিচালিত ১২টি টিম ১০ দিন ধরে এই জরিপ করবে।
ডেঙ্গুর প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, এই প্রতিবেদন আমরা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দিব, যাতে তারা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পারে।
যদিও বাড়ির আঙিনা কিংবা ছাদে এমন অবস্থার জন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার অভাবকেই দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, মশা হওয়ার মতো কোনো অবস্থায় যদি কারও বাসার ছাদে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রয়েছে সিটি করপোরেশনের। একটা অভিযান পরিচালনা করা গেলে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব।
তিন থেকে সাত দিন জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই বংশ বিস্তার করে ডেঙ্গুর বাহক এডিস।
বাংলাদেশের পাশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল।
রাজধানীর বনানীতে শনিবার ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের বাসভবনে বৈঠক শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত রিপ্রজেনটেটিভ ড. এ এ এডউইন স্যালভেডর।
এডিস মশা বা ডেঙ্গু রোগ বাংলাদেশে নতুন আসেনি, অনেক আগে থেকেই ছিল। এ সমস্যা মোকাবিলায় সঠিক পরিকল্পনা দরকার উল্লেখ করে এডউইন স্যালভেডরের বলেন, মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করতে চাই। এরই অংশ হিসেবে মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুই পক্ষের তথ্য এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছি। কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে সমস্যার সমাধান করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যে জায়গাগুলোতে সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধান বের করতেই কাজ করব আমরা। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এবং বাংলাদেশে ডেঙ্গুর আগের বছরের চিত্র দেখলে দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে সার্বিক পরিস্থিতি বেশ জটিল। তবে মহামারি বা আতঙ্কিত হওয়ার মত কিছু এখনও হয়নি।
এরপর মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট দিয়েছি। যেমন আমাদের ওষুধগুলো কার্যকর কি না- তারা পরীক্ষা, ওষুধে কোনো পরিবর্তন দরকার কি না, নতুন ওষুধ প্রয়োজন হবে কি না, এসব বিষয়ে আমাদের অতি দ্রুততম সময়ে জানাবেন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। তবুও আমাদের আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো অবস্থানে আছি। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। আর এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সচেতন না হলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
মিটফোর্ডে ভোগান্তিতে রোগীরা : রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় এবার ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগে ডেঙ্গু হলে সামান্য চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যেত। কিন্তু এবার আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরই রক্ত লাগছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের প্লেটলেট বিভাজন করে রোগীকে সাদা অংশ দেওয়া হচ্ছে। রক্তের এই প্লেটলেট বিভাজনের জন্য রয়েছে আলাদা মেশিন। তেমন একটি মেশিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতালে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সেটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তিতে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, যারা রক্ত পরীক্ষা বা প্লেটলেট বিভাজনের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক যাচ্ছেন তাদের বিকল্প হিসাবে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। মিটফোর্ডে সামন্য কিছু নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হলেও, বাকি কাজ করতে হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।
লিয়াকত আলী নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনদিন ধরে আমার মেয়ের জামাই এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বেশি অসুস্থ হওয়ার চিকিৎসক রক্তের সাদা অংশ লাগবে বলে জানান। তার কথা অনুযায়ী রক্ত সংগ্রহ করে প্লেটলেট বিভাজনের জন্য মিটফোর্ড হাসাপাতালের ব্লাড ব্যাংক যাই। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয় যে, তারা রক্তের সাদা অংশ বিভাজন করতে পারবেন না। তাদের মেশিন বিকল। ওখান থেকে তারা বলেন যে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শান্তিনগরের কোয়ান্টামে গিয়ে রক্তের প্লেটলেট বিভাজন করে সাদা অংশ নিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি আমার কাছে অদ্ভুত আর কষ্টদায়ক মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিকেল বিভাগ ব্লাড ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা ডা. দানিশ আরেফীন বলেন, রক্ত পরীক্ষা ও প্লাটিলেট বিভাজনের মেশিনটা অনেক দিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে একবারে যে নষ্ট হয়ে গেছে, সেটা বললে ভুল হবে। রক্তের প্লেটলেট বিভাজনের মেশিনটা লোড নিতে পারে না। বিদ্যুৎতের লো ভোলটেজ দেখায়। বিষয়টি অনেকবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ঠিক করবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। দুই সপ্তাহে আগে এ বিষয়ে একটি লিখিত দরখাস্তও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্লেটলেট বিভাজনের মেশিনটা যতক্ষণ না ঠিক করা হচ্ছে ততক্ষণ রোগীদের বিকল্পপথ দেখতে হবে। এমন বিষয়ে রোগী আসলে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তিনগরের কোয়ান্টামে গিয়ে রক্তের অংশের ভাগ করে আনতে বলি। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
এদিকে ট্রান্সফিউশন মেডিকেল বিভাগ ব্লাড ব্যাংকের সহকারী অধ্যাপক ডা. ওয়াসিম বলেন, এটা কতদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে তা আমি বলতে পারব না। আমি কিছু আগে এখানে বদলি হয়ে এসেছি। এসেই জানতে পেরেছি যে, রক্ত পরীক্ষার ও বিভাজনের মেশিনটায় সমস্যা আছে, ঠিকমত লোড টানতে পারে না। তাই বিকল্প হিসাবে কিছু কিছু রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংকে যেতে বলা হয়।
এছাড়াও লালবাগ থেকে মিটফোর্ড হাসাপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করাতে আসা ফারুক আহমেদ বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের ডেঙ্গু ধরা পড়লে প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে খুব বাজে অবস্থা দেখি। এরপর ওখান থেকে ধানমন্ডির একটি হাসাপাতালে গিয়েও সিট খালি পাইনি। পরে মিটফোর্ডে এসে কিছু টাকা দিয়ে সিটের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 10 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *