নিজস্ব প্রতিবেদক : হোয়াইট হাউসে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। রোববার ঢাকা, যশোর, নাটোর, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসব মামলা করা হয়। প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। ঢাকায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে প্রথম মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। আর বিচারক আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে অন্য মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা কার্যকরী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম খলিল। অবশ্য আদালত দুটি মামলাই খারিজ করে দেন। আদালত উভয় বাদীর জবানবন্দি নেন এবং নথি পর্যালোচনা শেষে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাওন আহমেদ, জুয়েল শিকদারসহ অনেকে শুনানি করেন।
যশোর: যশোরে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। রোববার সকালে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম মল্লিকের আদালতে এই মামলা করা হয়। মামলার বাদী হলেন যশোর শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা কামাল। মামলার বাদী তার এজাহারে বলেছেন, প্রিয়া সাহা দেশদ্রোহী, অবজ্ঞা সৃষ্টিকারী ও নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিসে গিয়ে তার কাছে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ চরম নির্যাতনের শিকার। যার কোনও সত্যতা নেই। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে বাদীর জন্য এটা চরম অবমাননাকর। এজন্য তিনি মামলা দায়ের করেছেন।
নাটোর: রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চক্রান্তের অভিযোগে নাটোরে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। রোববার দুপুরে নাটোর সদর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন গণমাধ্যমকর্মী নাসিম উদ্দিন নাসিম। মামলায় প্রিয়া সাহা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তার স্বামী বর্তমান দুদক সদর দফতরের উপপরিচালক পদে কর্মরত মলয় কুমার সাহা, ইউএসএ প্রবাসী তার দুই মেয়েসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার দুপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মো. আসাদ উল্লহ্ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, উপমহাদেশের অন্যান্য রাষ্ট্রে মুসলমানরা যে সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মের লোকজন ভোগ করছে। এজাহারে আরও বলা হয়, প্রিয়া সাহা একজন বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে দেশের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা না করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে হেয় করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান গুম হয়ে গেছে এবং মুসলিম মৌলবাদীরা ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, জায়গা দখল করেছে বলে বিচার চান। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। এটি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলার বাদী মো. আসাদ উল্লাহ্ সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য প্রিয়া সাহা মিথ্যাচার করেছেন। এটি আমাকে আহত করেছে। তাই আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
সিলেট: প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে সিলেটে রাষ্ট্রদ্রোহের দু’টি মামলা হয়েছে। রোববার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুতাসিম বিল্লাহর আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে প্রথম মামলাটি করেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রিমাদ আহমদ রুবেল। একইদিন দুপুরে একই অভিযোগে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে অপর মামলাটি করেন সাবেক সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সারোয়র মাহমুদ। রিমাদ আহমদ রুবেল বলেন, বিদেশের মাটিতে বসে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন প্রিয়া সাহা। বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ ও সরকারের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করেছেন তিনি। বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হওয়াতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিদেশে বসে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা এবং বাংলাদেশে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী দিন নির্ধারণের জন্য রেখেছেন। অপর মামলার বাদী সারোয়র মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছেন প্রিয়া সাহা। যা বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছেন তিনি। আদালত অভিযোগটি আমনে নিয়ে পরবর্তী নির্দেশের জন্য রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার প্রিয়া সাহা ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যাওয়া এক রোহিঙ্গা নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মিথ্যা তথ্য দেন। হোয়াইট হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার বিশ্বের ১৯টি দেশের ২৭ জনের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এ কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে প্রিয়া সাহাকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করতে দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে তিনি ট্রাম্পকে অনুরোধও করেন। প্রিয়া সাহা বলেন, বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশেই বসবাস করতে চাই। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ বাস করছেন। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জলিয়ে দিয়েছে, আমার জমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর কোনো বিচার হয়নি। এক পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতে চান, এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, সরকার দলীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠী এসব কর্মকান্ড চালায়।